ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:‘কফি আনান আসলে তোমাদের বাড়িঘরে সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়েছে বলবে’ এমন শিখিয়ে দেয়া কথা না বলায় কফি আনানের কমিশন চলে যাওয়ার পর কিয়ারী প্রাং ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে সেনাবাহিনী। গত শনিবার কমিশনের মুখোমুখি হওয়া ৪০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতারের পর অমানুষিক নীপিড়ন চালানো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মংডু থেকে বাস্তুহারা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, গত বৃস্পতিবার সকালে মংডুর টাউন প্রশাসক ও পুলিশ লোকজনকে জমায়েত করে বলেন, ‘কফি আনান এলে তোমাদের বাড়িঘরে সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়েছে বলবে।’
শনিবার মিয়ানমারের সময় সকাল সাড়ে ৯টায় কফি আনান কিয়কানপিন (কাউয়ারবিল) বিজিপি হেডকোয়ার্টারে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি কিয়টয়পিন (কিয়ারীপ্রাং)-এ মিলিটারির দেয়া আগুনে ভষ্মিভুত গ্রাম ও মার্কেট পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শনকালে সাবেক এই জাতিসংঘ প্রধান ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
কফি আনান বলেন, ‘সহিংসতা প্রদেশটিকে নতুন করে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং নতুন করে অনেককে ঘর-বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয়েছে- যা কখনোই কাম্য নয়।’
সরকারি বাহিনীকে সহিংসতা পরিত্যাগ করতেও পরামর্শ দেন তিনি।
কমিশন মংডুর গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করে চলে যাওয়ার পর থেকে নতুন নতুন গ্রামে সেনা ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে নির্যাতন করছে। সীমান্তবর্তী শহর মংডুর আশপাশে রোহিঙ্গা বসতিতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পরও হামলা হয়েছে। এতে কমিশনের সফরের শেষ হতে না হতেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
কেয়ারীপ্রাং, রাবাইল্লাইলা ও কাউয়ারবিল পালিয়ে আশ্রয়প্রার্থী এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসব গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন ও রোহিঙ্গাদের জনবসতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। অনেকে আবার যে যেভাবে পারছে পালিয়ে উপকুলীয় প্যারাবন, ধানক্ষেত, পাহাড়ে আশ্রয়ে চলে গেছে।
অপরদিকে কফি আনানের কমিশনের সাথে মিয়ানমারের সেবাহিনীর ভয়াবহ পৈশাচিকতার লোমহর্ষক বর্ননা দিয়েছেন সে সব রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ঘিরে রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে কমিশন পরিদর্শনে যেতে পারেন এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ব্যাপক সৈন্যসমাবেশ ঘটিয়ে আক্রান্তদের কমিশনের সাথে সাক্ষাত করতে বারণ করে দেয়া হয়েছিল।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়াবহ পৈশাচিকতা আড়াল করতে ও আক্রান্তদের সাথে কমিশনের সরাসরি সাক্ষাত রোধ করতে এই কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।
কফি আনানের কমিশন যে সব রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চলমান নৃশংসতা যাচাইয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করতে যাবেন এমন গ্রামগুলো সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছিল।
কিয়ারীপ্রাং গ্রাম থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা বলেন, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে সেনা মোতায়েন ও কমিশনের সাথে দেখা করতে মিলিটারির কঠোর হুশিয়ারির কারণে কফি আনানের সাথে আমরা সাক্ষাত করতে পারিনি। তবে তিনি পুড়ে যাওয়া এলাকাগুলো পরিদর্শন শেষে দক্ষিণ দিকে চলে যান। গত শনিবার রাতে সেনাবাহিনী মায়ুতং গ্রাম ছেড়ে যান যেখানে তারা শতশত রোহিঙ্গা মহিলাকে দুদিন ধরে খাদ্য পানীয় ছাড়া বন্ধি করে রেখেছিল।পরে ডারগিজার গ্রামের গুরুত্বপুর্ণ স্থান গুলোতে অবস্থান নিয়ে সেখানে বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় ঝুপড়ি তৈরি করে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে কমিশনের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে সরিয়ে রেখেছিল।
এদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে মিয়ানমারের নৌ বাহিনী। এসময় দ্বীপের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আলম (৩০) গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে প্রতিদিনের মতো সেন্টমার্টিনের পূর্ব পাড়ার আব্দুল হাসিমের ছেলে মোহাম্মদ আজিমের ফিশিং ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরের মাছ শিকারে যায়। ওই সময় কিছু বুঝার আগে বাংলাদেশ সীমানায় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ তাদেরকে পেছন থেকে ধাওয়া করে এবং এলোপাতারি গুলিবর্ষণ করে। জেলেরা প্রাণে বাঁচার জন্য কোনো রকম পালিয়ে এলেও গুরুতর আহত হয়েছেন ট্রলারের মাল্লা।
ট্রলারে থাকা অন্যরা জেলেরা তাকে দ্রুত সেন্টমার্টিন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।