নাসিক নির্বাচন: কার খরচ কত

ক্রাইমবার্তা রিপোট:আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) সবচেয়ে বেশি ১৫ লাখ টাকা করে খরচ করবেন সম্ভাব্য তিন প্রার্থী। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল ও ইসলামী ঐক্যজোটের এজহারুল হক। নির্বাচনি খরচে তাদের পরেই অবস্থান কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌসের। তিনি খরচ করবেন

নাসিক নির্বাচন

১৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খরচ করবেন আট  লাখ টাকা। বাকি প্রার্থীদের মধ্যে জাসদের মোসলেমউদ্দিন ও এলডিপির কামাল প্রধান খরচ করবেন দুই লাখ টাকা করে। আর ইসলামী আন্দোলনের মাসুম বিল্লাহ এক লাখ চার হাজার আটশ টাকা খরচ করবেন। নির্বাচন উপলক্ষে দাখিল করা হলফনামায় এ তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা থেকে প্রত্যেকের খরচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

সেলিনা হায়াৎ আইভী (আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের মনোনীত এই প্রার্থী নির্বাচনে ব্যয় করবেন ১৫ লাখ টাকা। আইভী উৎস দেখিয়েছেন মেয়র হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ও বেতনভাতা। হলফনামায় আইভী উল্লেখ করেছেন, ৭২ হাজার পোস্টারে খরচ এক লাখ ৪৪ হাজার টাকা, তিনটি নির্বাচনি ক্যাম্পের খরচ ৮৫ হাজার টাকা, ক্যাম্পে কর্মীদের খরচ ৫৫ হাজার টাকা, নিজের ও নির্বাচনি এজেন্ট এবং কর্মীদের পেছনে খরচ হবে ৭০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ভাড়া ১০ হাজার টাকা। এর বাইরে আইভীর দুই লাখ প্রচারপত্র ছাপানোর কাজে এক লাখ টাকা, হ্যান্ডবিল বাবদ এক লাখ টাকা, ডিজিটাল ব্যানার বাবদ আড়াই লাখ টাকা, নির্বাচনি প্রচারে একশ পথসভায় ১০ হাজার টাকা, মাইক ব্যবহার বাবদ এক লাখ ২৬ হাজার টাকা, নির্বাচনি প্রতীকের জন্য ৫০ হাজার টাকা, অফিস আপ্যায়ন বাবদ ৮০ হাজার টাকা ও কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়নে দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর বিবিধ খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

.

সাখাওয়াত হোসেন খান (বিএনপি)

নির্বাচনে আট লাখ টাকা খরচ করবেন বিএনপির এই প্রার্থী। তার আয়ের উৎস আইন পেশা। নির্বাচনি খরচের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা তাকে দেবেন মিল্টন হাওলাদার নামে বিদেশে চাকরিরত তার একজন ভাগ্নে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকার মো. আনছার উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাকে দান করবেন দুই লাখ টাকা। সাখাওয়াতের দেড় লাখ পোস্টারের জন্য আড়াই লাখ টাকা, ২৫টি ক্যাম্প অফিস স্থাপনে ৬০ হাজার টাকা, কর্মীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা, নিজের খরচ এক লাখ ১০ হাজার টাকা, কেন্দ্রীয় ক্যাম্প বা অফিসের জন্য খরচ ৪৫ হাজার টাকা, প্রার্থী এজেন্ট ও কর্মীদের যাতায়াত ৯৫ হাজার টাকা এবং ঘরোয়া বৈঠকের ভেন্যুর খরচ, শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও আসবাবপত্রের ভাড়াসহ এ খাতে ৬৩ হাজার ৫শ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এছাড়া প্রচারণায় লিফলেট বাবদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা, হ্যান্ডবিলে ৬০ হাজার টাকা, ব্যানারে ৬৭ হাজার টাকা, ডিজিটাল ব্যানারে ৮০ হাজার টাকা, পথসভার খরচ বাবদ এক লাখ টাকা, মাইকিং বাবদ ৮৫ হাজার টাকা, প্রতীকের জন্য ২০ হাজার টাকা, অফিস আপ্যায়ন বাবদ ৯ হাজার টাকা, কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়নের জন্য এক লাখ আট হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচারণা বাবদ ৭০ হাজার টাকা খরচ হিসাব দেখানো হয়েছে। এর বাইরে বিবিধ খরচ দেখানো হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

মুফতি এজহারুল হক (ইসলামী ঐক্যজোট)

নির্বাচনে এই প্রার্থীর খরচ দেখানো হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আট লাখ টাকা তার নিজের। এর বাইরে বিদেশে থাকা ভাই জয়নাল আবেদীন দেবেন চার লাখ টাকা এবং রহমতউল্লাহ নামের এক আত্মীয় দেবেন তিন লাখ টাকা। তার নির্বাচনি খরচে দেড় লাখ পোস্টারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে আড়াই লাখ টাকা, ২০টি ক্যাম্প অফিস স্থাপনে এক লাখ ১০ হাজার টাকা, এসব অফিসে কর্মীদের জন্য ৪৬ হাজার টাকা, প্রার্থীর যাতায়াত খরচ ৯৫ হাজার টাকা, বৈঠক খরচ ৬৩ হাজার পাঁচশ টাকা, লিফলেট বাবদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা, হ্যান্ডবিলের জন্য ৬০ হাজার টাকা, ব্যানার বাবদ ৬৭ হাজার টাকা ও ডিজিটাল ব্যানার বাবদ ৮০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া পথসভার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা, মাইকিং বাবদ ৮৫ হাজার টাকা, প্রতীকের জন্য ১৫ হাজার টাকা, কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়নের জন্য ৯ হাজার টাকা, কর্মী খরচ এক লাখ আট  হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা বাবদ ৭০ হাজার টাকা ও বিবিধ খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

.

মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল (বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি)

মাহাবুবুর রহমান ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন নির্বাচনে। তার আয়ের উৎস ব্যবসা। ব্যয়ের মধ্যে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা দিবেন তার মামা, চাচা ও আত্মীয়স্বজন। শুভাকাঙ্ক্ষী, দলীয় নেতাকর্মী, সদস্য ও সমর্থকদের কাছ থেকে নেবেন ১০ লাখ টাকা। নিজের দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কাছ থেকে নেবেন ৩০ হাজার টাকা। বাকি টাকা তার নিজস্ব । খরচের মধ্যে ৩০ হাজার পোস্টারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা, তিনটি ক্যাম্প অফিস স্থাপনের জন্য দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও এসব অফিসে কর্মীদের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এর বাইরে লিফলেট বাবদ দেড় লাখ টাকা, ডিজিটাল ব্যানারের জন্য এক লাখ ১৬ হাজার একশ টাকা, পথসভার জন্য ২২ হাজার পাঁচশ টাকা, মাইকিং বাবদ ৯০ হাজার টাকা, নির্বাচনি প্রতীকের জন্য দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা, কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়নের জন্য ৬০ হাজার টাকা ও বিবিধ খরচ ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৭ হাজার পাঁচশ টাকা। এই প্রার্থী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচারণা বাবদ কোনও খরচ দেখাননি হলফনামায়।

রাশেদ ফেরদৌস (কল্যাণ পার্টি)

কল্যাণ পার্টির প্রার্থী রাশেদ খরচ করবেন ১৩ লাখ টাকা ৩৫ হাজার টাকা। তার আয়ের উৎস ব্যবসা থেকে তিনি ব্যয় নির্বাহ করবেন চার লাখ ৪০ হাজার টাকা। স্ত্রী সুবর্ণা মির্জার কাছ থেকে নেবেন তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া মা হুমায়ারা বেগমের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ও অন্য আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে তিনি নেবেন তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা। নির্বাচনি ব্যয়ের সম্ভাব্য খাতে এক লাখ পোস্টারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা, ৩০টি ক্যাম্প অফিস স্থাপনের খরচ ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রার্থীর নিজ খরচ দুই লাখ টাকা, যাতায়াত খরচ দুই লাখ টাকা, ঘরোয়া বৈঠক খরচ ৪০ হাজার টাকা, লিফলেট বাবদ ৬০ হাজার টাকা, হ্যান্ডবিল বাবদ ৪০ হাজার টাকা, ব্যানার খরচ এক লাখ ১০ হাজার টাকা, পথসভার জন্য ২৫ হাজার টাকা, মাইকিং বাবদ ৪০ হাজার টাকা, প্রতীক খরচ ৩০ হাজার টাকা, কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়নের জন্য ৯০ হাজার টাকা ও কর্মী খরচ ৬০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। রাশেদ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচারণা বাবদ খরচ দেখিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা।

মোসলেমউদ্দিন (জাসদ)

জাসদের এই প্রার্থী দুই লাখ টাকা খরচ করবেন। তার আয়ের উৎস ব্যবসা। হলফনামায় ব্যয়ের সম্ভাব্য খাতে ১০ হাজার পোস্টারের জন্য ১৫ হাজার টাকা, ১০টি ক্যাম্প অফিস স্থাপনে ২০ হাজার টাকা, প্রার্থীর নিজ খরচ ১০ হাজার টাকা, যাতায়াত খরচ ১০ হাজার টাকা, ঘরোয়া বৈঠকের জন্য ১০ হাজার টাকা, লিফলেট বাবদ ১০ হাজার টাকা, ব্যানার খরচ পাঁচ হাজার টাকা, পথসভার জন্য ১৫ হাজার টাকা, মাইকিং বাবদ ২০ হাজার টাকা ও প্রতীক খরচ ১০ হাজার টাকা হিসাব করেছেন। এর বাইরে কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়নের জন্য পাঁচ হাজার টাকা, কর্মী খরচ ১০ হাজার টাকা ও বিবিধ খরচ ৬০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।

কামাল প্রধান (এলডিপি)

এই প্রার্থীও নির্বাচনে দুই লাখ টাকা খরচ করবেন বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। তার আয়ের উৎস ব্যবসা। তবে নির্বাচনি খরচের এক লাখ টাকা তিনি নেবেন বন্ধু সোহেল রানার কাছ থেকে। ব্যয়ের বিভিন্ন খাতের মধ্যে ১০ হাজার পোস্টারের জন্য ৪০ হাজার টাকা, ৪টি ক্যাম্প অফিস স্থাপনের জন্য ২০ হাজার টাকা, এসব অফিসে কর্মীদের পেছনে ১০ হাজার টাকা, আরেকটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্পের জন্য ১০ হাজার টাকা, প্রার্থীর যাতায়াতে ২০ হাজার টাকা, লিফলেট বাবদ আট হাজার টাকা, পথসভার জন্য পাঁচ হাজার টাকা ও মিইকিং বাবদ ১০ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এছাড়া কর্মীদের দৈনিক আপ্যায়নের জন্য ১০ হাজার টাকা, কর্মী খরচ সাড়ে চার হাজার টাকা ও বিবিধ খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচারণা বাবদ কোনও খরচ নেই কামাল প্রধানের।

মাসুম বিল্লাহ (ইসলামী আন্দোলন)

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় দেখানো হয়েছে এক লাখ চার হাজার আটশ টাকা। তার আয়ের উৎস ব্যবসা। ব্যয়ের মধ্যে ১০ হাজার পোস্টারের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা, তিনটি ক্যাম্প অফিস স্থাপনের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রার্থীর যাতায়াতে ১৫ হাজার টাকা, লিফলেট বাবদ ১০ হাজার টাকা, ব্যানারে ১০ হাজার ৮শ টাকা, মাইকিংয়ে ২২ হাজার টাকা, নির্বাচনের প্রতীকে এক হাজার টাকা ও বিবিধ খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।