ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:বালকটি কাঁদছিল তার বাবার জন্যে এবং সাংবাদিক সম্মেলনে সে তার বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানায়। রোববার এমন কুড়ি জন গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। ৬ বছরের ইকরাম হোসেন আহাদ তার বাবা এম হোসেন চঞ্চলকে ফিরে পাওয়ার জন্যে আকুল আবেদন জানিয়ে বলে, ‘হাসিনা আন্টি, দয়া করে আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি তার সঙ্গে নামাজ পড়ব’।
চঞ্চল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী, ২০১৩ সালের দোসরা ডিসেম্বর তিনি রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। তার সঙ্গে আরো ৩ জন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী ছিল। তার স্ত্রী রেশমা নিখোঁজের এ দাবি করেছে। রেশমা জানান, তার স্বামী ও ৫ বন্ধু জহিরুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, এম সোহেল, পাভেল ও মিঠু শাহবাগের শিশু পার্কের সামনে সেদিন রাতে ছিলেন। পাভেল ও মিঠু শিশু পার্কের টিকিট ও কিছু স্ন্যাকস কিনতে গেলে কয়েকজন লোক হঠাৎ এসে চঞ্চল ও তার বন্ধুদের ওপর চড়াও হয় ও বেদম প্রহার করতে থাকে।
রেশমা বলেন, পাভেল ও মিঠু সেখান থেকে পালাতে পারলেও সাদা পোশাকে ওই ব্যক্তিরা চঞ্চল ও তার বন্ধুদের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এর পর চঞ্চলের পরিবারের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশ ও বিভিন্ন থানা, কারাগার, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে খোঁজ খবর নিয়েও তার কোনো সন্ধান পাননি।
শুধু চঞ্চল কিংবা গুম হওয়া বাকি ১৯ জন ছাড়াও অনেককে গত তিন বছর আগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের পরিবাররা এখনো স্বজনদের ঘরে ফেরার অপেক্ষা আছে। তারা এও জানে না গুম হওয়ার পর তারা বেঁচে আছেন কি না।
এর আগে গুম হয়ে যাওয়া অনেকের বাবা কিংবা মা মারা গেছেন। গুম হয়ে যাওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলামের মা হাজেরা খাতুন বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। ছেলে নিখোঁজ, আমি জানি না সে বেঁচে আছে কি না, আমার মৃত্যুর আগে তার খোঁজ চাই, আমার ছেলেকে ফেরত চাই।
গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছাত্র। পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানরা বিএনপি কিংবা দলটির অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে অন্তত কুড়ি জন গুম হয়ে যায়। এদের কাউকে কাউকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন স্বজনরা। একই বছরের ২৮ নভেম্বর পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের সামনে থেকে গুম হয়ে যান খালিদ হাসান সোহেল। ৩ ডিসেম্বর বসুন্ধরা এলাকা থেকে আল আমিন গুম হয়ে যান। নিজাম উদ্দিন মুন্না ও তরিকুল ইসলাম ঝন্টু দক্ষিণখানের মোল্লার টেক থেকে ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর গুম হয়ে যান। এর পরের দিন গুম হন মাহবুব হাসান ও কাজি ফরহাদ সবুজ বাগ এলাকা থেকে। ১১ ডিসেম্বর গুম হন সেলিম রেজা পিন্টু গুম হন পল্লবী এলাকা থেকে। গুম হন সাজেদুল, জাহিদুল করিম তানভির, মাজহারুল ইসলাম রাসেল পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে। মুগদাপাড়া থেকে গুম হন আসাদুজ্জামান রানা।
এছাড়া এম এ আদনান চৌধুরী, কাওসার আহমেদ, সম্রাট মোল্লা ও তরিকুল ইসলাম তারা গুম হন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং তাদের স্বজনরা দাবি করছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাদের তিন বছর আগে তুলে নেয়ার পরও আজও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। ঢাকা ট্রিবিউন থেকে অনুবাদ