নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এরই মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি ও মরক্কো সফর সম্পর্কে অবহিত করতে গত রোববার বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনেও এ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।
সূত্রমতে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর সুবিধাজনক সময়ে সংলাপ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খুব সীমিত সময়ের মধ্যেই এ সংলাপ শেষ করা হবে। এ জন্য একদিনে একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের মতামত নেবেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে কোন কোন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রথমে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কথা ভাবা হলেও বিএনপি সংসদে না থাকায় বিকল্প চিন্তা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামীর নেতারা সংলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।
সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি সব সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিলেও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ওই সংলাপে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারক নেতারা অংশ নেন। এই সংলাপের পর সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছর মেয়াদের এই নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে কয়েকটি নির্বাচনে শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের কেউ কেউ। বিএনপিও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা সকলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়ে বিএনপি চিঠি পাঠালেও এখনও বঙ্গভবন থেকে এ ব্যাপারে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তার নিজের পছন্দে নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের পদ্ধতি নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে নানা প্রস্তাব দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমকালকে জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার কিছু নেই। আগেরবারের প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।সমকাল