ক্রাইমবার্তা রিপোট:বর্তমান সরকারকে নব্য ফ্যাসিবাদ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ধিক্কার জানাচ্ছি এই সরকারকে। যারা আজ স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসন করে নতুন জীবন দিয়ে সরকারের অঙ্গ বানিয়েছে। রাজনীতিতে ফিরিয়ে এনেছে। এটাই হচ্ছে আইরোনি (বিদ্রুপ)। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব করে পরাজিত করে ফেলে দিয়েছিল, তাদের নিয়েই তারা একটা অনৈতিক সরকার গঠন করে দেশের মানুষের ওপর ফের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারকে স্বৈরাচার বললে সঠিক হবে না। স্বৈরাচারের যে সংজ্ঞা তা ছাড়িয়ে অনেকদূর চলে গেছে তারা। এখন এটাকে নব্য ফ্যাসিস্ট সরকার ছাড়া কিছু বলা যাবে না।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন মির্জা ফখরুল। ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘৯০‘র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’।
নব্বইয়ের ডাকসুর ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও তৎকালীন ডাকসুর এজিএস নাজিমউদ্দিন আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খোন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, আসাদুর রহমান খান আসাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বলতে চাই- শুধু অতীতচারিতা করে, বিএনপিকে বকাবকি করে, বিরোধী দলকে দমন করে, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গণতন্ত্রের যে আকুতি, মানুষের যে আশা-আকাংখা তাকে স্তব্ধ করে রাখা যাবে না। অতীতেও স্তব্ধ করা যায়নি। আজ পর্যন্ত জোর করে বা অস্ত্রের জোরে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা যায়নি। হয়ত কিছুদিনের জন্য পারা গেছে, চিরদিনের জন্য পারা যায়নি। ইতিহাস নেই।
সরকার প্রধানের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, আবারো সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রধানের কাছে আহবান জানাতে চাই, আপনারা একসময় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবেন না। অতীতে একবার করেছেন, আর করবেন না। যে খাতায় ধিকৃত ব্যক্তিদের নাম লেখা আছে সেখানে নাম লেখবেন না। এটা আমরা চাই না। আমরা চাই, এদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাক, উজ্জ্বল হয়ে থাক। আমরা চাই, এই দেশের মানুষ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে বাস করুন। যখন সময় হবে জনগণ তাদের সরকার বদল করতে পারে, সেই অধিকারটা তারা প্রয়োগ করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সরকারের কাছে বেশি কিছু চাই না। আমরা একটা নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাই। যেখানে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়লাভ করাবে। আমরা বলি না যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। আমরা বলি, জনগণের প্রতিনিধিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। যারা আজ দেশ শাসন করছেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি নন। কারণ তারা নির্বাচিত হননি।
মঙ্গলবার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত চার যুবক বনানী থেকে নিখোঁজ হওয়া এবং নাটোর থেকে গুম হওয়া তিন ছাত্রলীগ নেতার লাশ দিনাজপুরে পাওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল বলেন, এই হচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র। এই হচ্ছে বাংলাদেশের ছবি। এরমধ্যে মন্ত্রীদের কথা শুনেন- কী বলবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছে, বিরোধী আন্দোলনের সময়ে গুম হওয়া মানুষের বিষয়ে পরিবারের আকুতির জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, ওরা আত্মগোপন করে আছে অথবা নিজেরাই লুকিয়ে আছে। তাদেরকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার? এই দায়িত্ব আপনার ওপরই বর্তাবে আপনি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি তাদের খুঁজে বের করে দেবেন।
ইসি পুনর্গঠন প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতি সংলাপ করবেন- এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে এই সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, আজকে একটা ভালো খবর আমরা পেয়েছি। তার প্রেস সেক্রেটারি দুপুরে বলেছেন যে, তিনি বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। জনগণের দাবিকে সম্মান করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন, তাকে ধন্যবাদ। আমরা খুব খুশি হয়েছি।
অতীতের মতো ‘ব্যর্থ’ সংলাপ যাতে না হয়, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গতবারও রাষ্ট্রপতি আলাপ করেছিলেন। সেই আলাপ করার পরেই আওয়ামী লীগের যে প্রেসক্রিপশন ছিলো, সেই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেছেন এবং তার মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত করেছিলেন। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে বিগত সব কয়েকটি নির্বাচনে আমরা দেখেছি, কী ভয়াবহ একটা চিত্র ধারণ করেছিল। সবচেয়ে বেশি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে ওই নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতার কারণে শতকরা ৫ জন লোক ভোট কেন্দ্রে যায়নি এবং ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ১৯৯০ সালের যে প্রেরণা ও চেতনা, তাকে ধারণ করে সকলকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের জন্য ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল, এই ছাত্র-জনতাকে জাগ্রত করে তাদেরকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে, সংগ্রামের পথে নিয়ে যেতে হবে। এটাই হোক- আজকের দিনের শপথ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদ পদত্যাগ করে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এই দিনটিকে বিএনপি স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করছে।