ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিশেষ প্রতিনিধি, তারেক উদ্দিন জাবেদ:সরকারি নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে জেলার অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে অহরহ পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইট সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশ দূষিত হলেও সে দিকে কারোরই খেয়াল নেই। নিরব হয়ে আছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় এলাকা শরণখোলা বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা গুলো বেশির ভাগই জনবসতি ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ২ শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। অনেক ভাটার মালিক কাঠের পাশাপাশি নামে মাত্র কয়লা, তেলের গাদ ও টায়ার জ্বালিয়ে থাকে।
সরজমিনে সদর উপজেলার ১৯নং তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের মুদিখানা পোলের গোড়া নামক স্থানে ৬একর সম্পত্তিতে প্রভাবশালি মিজানুর রহমান বিপু ও মোফাচ্ছের হোসেন মাসুম সত্বায়িত (বাংলা ইটভাটা) বিএম ব্রিক্স ম্যানুফ্যাবচারিং, এইচ এন্ড বি ম্যানুফ্যাকচারিং, ১৭নং ভবাণীগঞ্জ ইউনিয়নের চরভূতি গ্রামের ভয়ারডগি নামকস্থানে এইচ এইচ ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং নামে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ ইটভাটা গুলোর চার পাশে হাজার হাজার মণ কাঠের স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এ যেন দেখার কেউ নেই।
তাছাড়া জেলার প্রায় ইটভাটার কেউ কেউ ভাটার এক পাশে কেউ আবার ভাটার উপরে কাঠ রেখে অহরহ ইট পোড়াচ্ছে। পাশাপাশি নামেমাত্র কয়লা, তেলের গাদ ও টায়ার জ্বালানোর জন্যে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়লার চেয়ে কাঠের পরিমাণ বেশি দেখা যায়। আবার কোন কোন ইটভাটায় কোন কয়লা দেখা যায়নি।
ইটভাটার মালিক, ম্যানেজার ও স্টাফদের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের হওয়ায় কথা বলতে চাইলে অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেন।
ওই সমস্ত এলাকায় ইটভাটার ইট, কাঠ, মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর আসা-যাওয়ার সময় বেশি নজর কেড়ে নেয় যেখানে ইট থাকার কথা সেখানে রয়েছে কাঠ।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কজন ট্রাক্টর চালক জানায়, আমরা বহন করি ভাড়া পাই। কাঠ আনলেও ভাড়া পাবো। ইট ও মাটি বহন করলেও ভাড়া পাবো। কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি ব্রিক ফিল্ড মালিকদের ব্যাপার।
একাধিক কৃষক জানান, ইট পোড়ানোর পর ভাটাসংলগ্ন জমিগুলোয় ধান উৎপাদনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে ফসলের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এভাবে পসলি জমির পাশে ব্রিক ফিল্ড হলে আমরা না খেয়ে থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার প্রদীপ কুমার দত্ত নবচেতনাকে বলেন, ইটভাটার মালিকরা কয়লার সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে কাঠ পোড়াচ্ছে বলে শুনেছি। জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হয়েছে। সহসাই আমরা কাঠ পোড়ানো ইটভাটা গুলোতে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।
বন বিভাগের জেলা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর সাথে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বক্তব্য নিতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মোবাইল নাম্বার অফিসের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে খোঁজ কওে পাওয়া যায়নি।
ইট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুবেল হাওলাদার মুঠোফোনে নবচেতনাকে বলেন, বর্তমানে ইটভাটা গুলোতে প্রচুর পরিমাণে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।