নাসিক নির্বাচনে প্রচারণা : চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চ ১৬ ডিসেম্বরের আগেই মাঠে নামবেন খালেদা জিয়া

আসন্ন বিজয় দিবসের আগেই বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠে নামবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ১৬ ডিসেম্বরের আগেই সুবিধাজনক সময়ে যেকোনো দিন তিনি রাজপথে বের হবেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে প্রচারণা চালাবেন এবং সেদিনই নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়িবহর নিয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চে যেতে পারেন। চট্টগ্রামে তিনি একটি সমাবেশ বা পথসভা করে সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বক্তব্য রাখবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এরপর পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বিভাগ ও বড় জেলা শহরেও সমাবেশ করবেন বেগম জিয়া। বর্তমানে তার সফরসূচি চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট নেতারা কাজ করছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে খালেদা জিয়ার সফরসূচি নিয়ে এরই মধ্যে দলটির নীতিনির্ধারকেরা নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করেছেন। গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সাথে গুলশান কার্যালয়ে মতবিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ বৈঠকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদসহ একাধিক ইস্যুতে চট্টগ্রামে একটি সমাবেশ অথবা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করা যায় কি না সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মীর নাছির, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেখানকার সেনাবাহিনীর অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে একটি সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ-পরবর্তী সমাবেশ করবে দলটি। সেখানে বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। কোনো সমস্যা না থাকলে আগামী ১৪ ডিসেম্বর সম্ভাব্য সমাবেশের দিন ধার্য করে বেগম জিয়ার সফরসূচি চূড়ান্ত করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তা সম্ভব না হলে এ মাসেই সুবিধাজনক সময়ে রোডমার্চ-পরবর্তী সমাবেশ করতে চায় দলটি। এ ব্যাপারে শিগগিরই দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র নেতা নয়া দিগন্তকে জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ধরে ধরে গুলি ও হত্যা করছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আমরা মুসলমান হিসেবে তো বসে থাকতে পারি না। সরকারও তো চুপ। বিএনপি যেহেতু ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী, সেহেতু রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতনের প্রতিবাদ করা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য।
এদিকে দলের কয়েকজন নেতা আলাপকালে জানান, নাসিক নির্বাচনকে বিএনপি ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে নিয়েছে। কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শন না করে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার জন্য দলের সবপর্যায়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন। গণসংযোগের দিনক্ষণ ঠিক করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারা এ নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাইতে শুরু করেছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, নাসিক নির্বাচনে সফলতা পেতে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। নির্বাচন পরিচালনা ও সার্বিক তদারকির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কি না এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানিসহ যাবতীয় অনিয়ম কেন্দ্রে অবহিত করার জন্য স্থানীয়পর্যায়ে বিশেষ কমিটি করা হয়েছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রধান করে একটি সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি গতকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছেন।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হতে যাওয়া নাসিক নির্বাচনে গতকাল প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপরই বিকেলে আসরের নামাজের পর স্থানীয় কদম রসূল মাজার জিয়ারত ও দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রচারণার উদ্বোধন করেন।
এদিকে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ না করায় এই নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামতে কোনো বাধা নেই। তাই দলের চেয়ারপারসন অবশ্যই এ সুযোগ কাজে লাগাবেন বলে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কবে প্রচারণা চালাবেন তা এখনো ঠিক হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে কয়েক দফা সমাবেশের অনুমতি চেয়েও পায়নি বিএনপি। ফলে ডিসেম্বরে ঢাকায় ব্যাপক শোডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় দলটির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বিজয় র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। সেখানেও ব্যাপক লোকসমাগমের টার্গেট রয়েছে; কিন্তু জানুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার চিন্তাভাবনা থাকায় আপাতত সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার চিন্তাও হচ্ছে বিএনপিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যু এবং সরকারবিরোধী জনমত তৈরির লক্ষ্যেই রাজপথে নামার সিরিজ পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে সরকার আবারো একতরফা নির্বাচন কমিশন গঠন করলে আন্দোলন জোরদার করবে বিএনপি।
এ দিকে বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের টার্গেট ছিল গত নভেম্বর। নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে তৃণমূল গঠনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ডিসেম্বর মাসকে শেষ সময় হিসেবে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই মাসের মধ্যেই তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে ষাট শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। গত রোববার কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জামালপুর, ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলা কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তৃণমূল পুনর্গঠন শেষে আবারো জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মাঠে নামবে বিএনপি।

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।