ক্রাইমবার্তা রিপোট:প্রিয় শহর ময়মনসিংহের পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুল হক শাকিল।
আজ বুধবার বিকেলে কাচিঝুলি আঞ্জুমান ঈদগাহ্ মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাযার পর বাদ মাগরিব বাঘমারায় পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
শাকিলের নামাজে জানাযায় অংশ নেন হাজারো শোকাতুর মানুষ।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে বাঘমারা রোডের বাড়ির সামনে পৌঁছায় তার লাশবাহী গাড়ি। এ সময় তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
তার মৃত্যুতে আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, কবি ও লেখক সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর কারণ জানতে ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।
স্বজনরা জানিয়েছেন, বিকেল ৪টার দিকে নগরীর টাউন হল মাঠে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর বাদ মাগরিব নগরীর আঞ্জুমান মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স বাঘমারায় পৌঁছানোর পর সেখান থেকে লাশ ময়মনসিংস শহরের শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন শাকিলকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়।
এরপর লাশ নিয়ে যাওয়া হবে ময়মনসিংহের ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে বাদ মাগরিব দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, এর আগে আজ বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে মাহবুবুল হক শাকিলের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও শাকিলের রাজনৈতিক সহকর্মী, স্বজনেরা, তার কাছের বন্ধু, সংস্কৃতিক ও গণমাধ্যম কর্মিরা অংশ নেন।
পরে তার লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও শাকিলের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
তারা বলেন, ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেও একজন নির্মোহ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি।
জানাজা শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাকিলের লাশ ময়মনসিংহের বাঘমারায় নেয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে।
এর আগে আজ সকাল আটটার দিকে বারডেম থেকে শাকিলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়। এরপর সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢামেক মর্গে তার ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়।
শাকিলের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। ওই বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী অধ্যাপক ডা. একে এম শফিউজ্জামান খায়ের, প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস।
ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, শাকিলের শরীরে আঘাতে কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বড়। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে সিআইডির রাসায়নিক ল্যাবে।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাকিলের মৃত্যুর কারণ জানতে কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, ভিসেরা পরীক্ষার পর ময়নাতদন্তের রিপোর্টসহ পাপ্ত সব তথ্য পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত মতামত প্রকাশ করা হবে।
শাকিলের হৃদপিণ্ডের আকার বড় হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেন, হৃদপিণ্ডের আকার বিভিন্ন কারণে বড় হতে পারে। সব পরীক্ষার পর মূল কারণ জানা যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে শাকিলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, কেউ তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।
শাকিলের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ গুলশান দুই নম্বরে সামদাদো রেস্তোরাঁটি সাময়িক বন্ধ করে দেয়। এছাড়া রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করে পুলিশ।
মাহবুবুল হক শাকিল ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাবা আইনজীবী জহিরুল হক খোকা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক এই ছাত্রনেতা সাহিত্য অনুরাগী ও লেখক ছিলেন। তার প্রকাশিত বইগুলো হলো ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’ ও ‘মন খারাপের গাড়ী’।