ক্রাইমবার্তা রিপোট:শেখ কামরুল ইসলাম॥ ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার দিনব্যাপী সাতক্ষীরায় বর্নাঢ্য র্যালি, আলোচনাসভা ও স্মরনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে র্যালিটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান দেন। পরে দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও শহীদ স্মরণ সভা। জেলা কমান্ডার মোশাররফ হোসেন মশুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর হোসেন (সজল), সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের সরদার, মহিদ খান চৌধুরী, নাজমুজ শাহাদাত, মুক্তিযোদ্ধা হাসনে জাহিদ জজ, সদর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাসানুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের যুগ্ম আহবায়ক লায়লা পারভীন সেজুতি, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সহ-সভাপতি মো: আজিজুল ইসলাম খান প্রমুখ। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে রাস্তায় নেমে আসে মুক্তিপাগল আপামর জনতা। দীর্ঘ ৯ মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেদিনের সাহসী সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে সাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সাতক্ষীরা শহরে পাকিস্তান বিরোধী মিছিলে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে। আর এখান থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার দামাল ছেলেদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া। মুক্তিযুদ্ধের খরচাদি বহনের জন্য সাতক্ষীরা ট্রেজারী হতে অস্ত্র লুট আর ন্যাশনাল ব্যাংক হতে অলংকার টাকা পয়সা লুটের মধ্য দিয়ে শুরু মুক্তির সংগ্রাম। ৮ম ও ৯ম সেক্টরের অধীনে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনিং শেষে ২৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় । এ সময় পাক সেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। ১৭ ঘন্টাব্যাপী এ যুদ্ধে শহীদ হয় মাত্র ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। আহত হয় আরো ২ জন মুক্তিযোদ্ধা। এরপর থেমে থেমে চলতে থাকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্ত হামলা। এসব যুদ্ধের মধ্যে ভোমরার যুদ্ধ, টাউন শ্রীপুর যুদ্ধ, বৈকারী যুদ্ধ, খানজিয়া যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য । এ সব যুদ্ধে শহীদ হয় ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। লাইটের আলোয় অসুবিধা হওয়ায় ৩০ নভেম্বর টাইম বোমা দিয়ে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভীত সন্ত্রস্ত করে ফেলে পাক সেনাদের। রাতের আঁধারে বেড়ে যায় গুপ্ত হামলা। পিছু হটতে শুরু করে পাক সেনারা। ৬ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে বাঁকাল, কদমতলা ও বেনেরপোতা ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে পাক বাহিনী সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর জয়ের উন্মাদনায় জ্বলে ওঠে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা। এ সরকারের ওয়াদা মোতাবেক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেে চলেছে। বাকী যুদ্ধাধীদের বিচার সম্পন্ন করার দাবী জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা স্মৃতিসৌধ থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দেয়া ও সাতক্ষীরার গনকবরগুলো সংরক্ষনেরও দাবী জানিয়েছেন।
Check Also
আশাশুনি সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন করা …