ফেসবুকে ঝড়-‘ধর্ষক কোনও যুক্তিতেই স্বামী হতে পারে না’

ক্রাইমবার্তা  রিপোট:বিবাহ বিষয়ক একটি আইনের খসড়া নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে এই আইনের ধারায় নাকি বলা হছে শারীরিক সম্পর্কের পর নারী যদি গর্ভবতি হয়ে যায় তাহলে ওই পুরুষের ওই নারীকে বিবাহ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন।2

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা চিন্তা করেন, একটা মেয়ে যে কোন কারণেই হোক যদি ১৩/১৪ বছর বয়সে প্রেগনেন্ট (গর্ভবতী) হয়ে গেল, তাকে এ্যাবরসন করানো গেল না। যে শিশুটি নেবে সেই শিশুটির অবস্থানটা কোথায় হবে? তাকে কি সমাজ গ্রহণ করবে? তাকে কি বৈধভাবে নেবে? বাস্তবতা হচ্ছে নেবে না।”

তিনি আরও বলেন “এ রকম যদি কোন একটা ঘটনা ঘটে তাহলে কি হবে? যে শিশুটার জন্ম হলো তার কি হবে? যে মেয়েটা সন্তান জন্ম দিল তার অবস্থাই বা কি হবে? এই ধরনের যদি কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে সেখানে যদি বাবা-মা এবং কোর্টের মতামত নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে মেয়েটা বেঁচে গেলা। আর যে বাচ্চাটা হলো সেও বিধতা পেল। এই শিশুটি একটা ভবিষ্যত পেল।”

সোস্যাল মিডিয়ায় বলাবলি চলছে এই আইন কার্যকর হলে ধর্ষণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বেড়ে যাবে জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের হার।

এ বিষয়ে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন, “গত মাসে তুরস্কে ধর্ষণ করার পর বিয়ে করলে অপরাধ হবে না বলে আইন পাস করার কথা হচ্ছিল। আমরা পরোক্ষভাবে ধর্ষণের বৈধতা দিলাম। একই ধর্মের কেউ ধর্ষণ করলে নাহয় বিয়ে করিয়ে দেয়া যাবে কিন্তু ধর্ম যদি এক না হয়? তখনও কি বিয়ে করিয়ে দেয়া যাবে? যাক, আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? আমরা বটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী।”

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নির্ঝর মজুমদার লিখেছেন, “এই আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যার সবথেকে বাজে ভিকটিম হবে সংখ্যালঘু এবং নাবালক নারীরা। এবং জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরন আরও বাড়বে।”

নির্ঝরের পোস্টের জবাবে আশিকুর রহমান শোভন নামে একজন লিখেছেন, “হ্যাঁ যে হিন্দু/মুসলিম ছেলে মেয়েদের সম্পর্ক হয়। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হলে আর ভুলবশত হিন্দু মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে মুসলিম ছেলেরর কোনো চিন্তাই নাই। সে বলবে আইনে আছে বিয়ে করায় দাও!”

ফাহরিয়া কবিরের মতে এমন আইনে ভিকটিম হবে নারী, মেয়ে ও শিশু মেয়েরাই। তিনি লিখেছেন, “অবশ্যই নাবালক নারী/মেয়ে/শিশুরাই সবচেয়ে বাজে ভিকটিম হবে! এখানে তর্ক-বিতর্কের আর কিছু নাই! এক অপরাধ ঢাকার জন্য যদি অন্য অপরাধকে জায়েজ করা হয় তাহলে অপরাধ/অন্যায় কমার আর কোনো সুযোগ নাই! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে আমার মাথায় আগুন ধরে যাবার পরও আমার কিছুই করার ক্ষমতা নাই। আমার চেঁচানোতে কারোরি কিছু যাবে আসবে না!”

অনেকে মনে করছেন ধর্ষণের পর মেয়েটিকে সুবিচার দিয়ে বাঁচার রসদ না দিয়ে যদি ধর্ষকের সঙ্গেই সংসার করতে দেওয়া হয় তা তার জন্য আরেকটি মৃত্যুরই সমান। সাংবাদিক সালমান তারেক শাকিল নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “ধর্ষক কখনোই, কোনও যুক্তিতেই স্বামী হতে পারে না। ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড হোক।”

এমন একটি আইন কেন হচ্ছে এই বিষয়ে নিজস্ব পর্যালোচনা লিখেছেন সাংবাদিক প্রবীর শিকদার। তিনি লিখেছেন, “আমাদের নিম্ন আদালতগুলোতে কর্মরত আইনজীবীদের মোটামুটি একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখি, মামলায় কোনো অপরাধের নির্মোহ উপস্থাপনার চেয়ে বিচারের আগেই অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনের ধারাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আর সেটি করতে গিয়ে তারা অপরাধের প্রকৃত ঘটনা বিকৃত করে আইনের ধারায় ফেলে সাজিয়ে নেন। আর একারণে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীকে বেশি সাজা দিতে গিয়ে উল্টো হয়, বেকসুর খালাস পেয়ে যায় প্রকৃত অপরাধী। ওই ধরনের আইনজীবীরা যখন পারস্পরিক সম্মতিতে পরিণত বয়সের প্রেমিক-প্রেমিকার কিংবা নারী-পুরুষের দৈহিক মিলনকে ক্ষেত্রবিশেষে ধর্ষণ আখ্যা দেন, তখন কিন্তু ধর্ষণের মতো একটি কঠিন অপরাধও গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। আইন চর্চায় আইনজীবীদের এমন বহু অনাকাক্সিক্ষত উপস্থাপনার কারণেও বিকৃত সামাজিক মূল্যবোধ আমাদেরকে বিভ্রান্ত করে। আর সেই সূত্রেই আমরা ধর্ষককে নারীর স্বামীর আসনে বসানোর উস্কানি দিয়ে থাকি। সুশাসন নিশ্চিত করতে আইন চর্চার এই যে বিকৃত ধারা সেটি অবশ্যই আইনজীবীদেরই রুখতে হবে।”

Check Also

এমপি জগলুলের ভাই জহিরুল হায়দার বাবু গ্রেফতার

সাতক্ষীরার শ্যামনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম জরুহুল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।