সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চায় : প্রধানমন্ত্রী

ক্রাইমবার্তা  রিপোট:মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর এবং পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে। দু’জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান থাকতে হবে। উন্নয়নের জন্য যেসব কমিটি হবে সেসব কমিটিরও অন্তত ৫টি কমিটিতে নারীরা চেয়ারম্যান থাকবে। যাতে তারা উন্নয়নের কাজে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা ও বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী- জাতীয় সংসদের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদই নারীরা দখল করে আছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবেন মেয়েরা এটা কেউ কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। যাহোক, আমি উদ্যোগ নেই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ভিসি-প্রো-ভিসি নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি এবং আছেন, তারা কিন্তু খুব ভালোও করছেন। এমনকি আমরা বুয়েটেও দিয়েছিলাম (নারী ভিসি) কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি হঠাৎ ক্যান্সারে মারা যান।’

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী প্রো-ভিসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভবিষ্যতেও আরো মহিলাকে দায়িত্ব দেয়ার ইচ্ছা আছে। কারণ, আমরা দেখেছি মহিলাদের দায়িত্ব দিলেই তারা ভালোভাবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালাতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগে প্রথম হাইকোর্টের মহিলা জজ আমরা আওয়ামী লীগ সরকারই নিয়োগ দেই। রাষ্ট্রপতিকে বলেই আমি এটা করাই। এখনতো অ্যাপিলেট ডিভিশন পর্যন্ত এবং আমাদের সরকারের সময়ই এটা হয়েছে। প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের মেয়েরা অবদান রাখছে। আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা যেমন বর্ডার গার্ডের মেয়েদের নিয়োগ দেয়া শুরু হয়েছে। আমাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে পূর্বে কিন্তু মেয়েদের কোনো স্থান ছিলো না। ’৯৬ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার সেটা শুরু করে। এখন প্রতিটি বাহিনীতেই আমাদের মেয়েরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করছে এবং আমাদের মেয়েরা কিন্তু ফাইটার প্লেনও চালাচ্ছে। তারা দুর্গম গিরিশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন। আমাদের মহিলা দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, দাবা ও ফুটবল খেলছে, দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, তথ্য-প্রযুক্তি, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, গণমাধ্যম, ক্রীড়া জগতসহ সব চ্যালেঞ্জিং কাজে নারীদের পেশাদারিত্ব প্রশংসনীয়।

শেখ হাসিনা বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে তাঁর সরকারের ব্যাপক কার্যক্রমের সাফল্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে বিশ্বের ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬৮তম স্থানে রয়েছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৭ম স্থান অর্জন করেছে।

শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ছেলেদের চেয়ে এখন মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। মহিলা শিক্ষিকার সংখ্যাও বেশি। জেন্ডার সমতা নিয়ে যারা কথা বলেন তাদের বলি, আমাদের দেশে ঘটনা কিন্তু উল্টো। স্কুলগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে বেশি। এখন ভাবতে হচ্ছে ছেলেদের সংখ্যাও আবার কিভাবে বাড়িয়ে তোলা যায়।

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পগুলোতে বাধ্যতামূলক অগ্রাধিকার রয়েছে। এছাড়া এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে সহজে ঋণ দেয়া হচ্ছে, এতে তারা ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারছেন।

নারী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন। এ কাজে তাঁকে নেপথ্যে থেকে সর্বাঙ্গীন সহায়তা করেন আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন জাতীয় মহিলা সংস্থা দেশের ৬৪টি জেলা এবং ৪২৮টি উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের সরকার দেশে নারী জাগরণে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এখন নারী উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’

সরকারের নারী উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ স্ববেতনে ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বর্ধিত করা হয়েছে। সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০ করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। ডিএনএ আইন-২০১৪ গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে কার্যকর হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যুগব্যাপী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৩-২০২৫) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬ জাতীয় সংসদে অনুমোদন হয়েছে। যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ সংশোধন করে যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৫ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ৪০ লাখ নারী শ্রমিক গার্মেন্টসে কাজ করে। দু’দফায় তাদের বেতন সর্বসাকুল্যে শতকরা ২১৯ ভাগ বাড়িয়ে ১ হাজার ৬৬২ টাকা থেকে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা করেছি। মহিলা উদ্যোক্তারা পুরুষদের থেকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ কম সুদে ঋণ পাচ্ছেন।

দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা। ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল থেকে গার্মেন্টসে কর্মরত স্তন্যদায়ী ও গর্ভবতী মা’কেও ভাতা প্রদান। দেশের ৬৪টি জেলায় ৪৮৯টি উপজেলার ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়নে দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি চাল, ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৮৮৮ জন নারীকে সেবা প্রদান, মহিলা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৭ হাজার ৬৩৯টি সমিতিতে সরকারী অনুদান প্রদান-প্রভৃতি সরকারি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুস্থ নারীদের জন্য সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন চালু, বিধবা ও নিগৃহীত মহিলা ভাতা প্রাপ্তদের সংখ্যা ১০ দশমিক ১২ লাখ থেকে ১১ দশমিক ১৩ লাখে উন্নীত করা এবং সন্তান সম্ভবা ও ধাত্রী মায়ের ভাতাও ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে একটি উচ্চ-মাধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো- এটিই হোক রোকেয়া দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।

প্রধানমন্ত্রী আলোচনা পর্ব শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘জ্বালাও বহ্নিশিখা’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।