ক্রাইমবার্তা রিপোট:নির্বাচন কমিশন যত শক্তিশালীই হোক, প্রশাসন দলীয় সরকারের অধীনে থাকলে তারা ‘অসহায়’ হয়ে যায় মন্তব্য করে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হলে চলবে না, নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হচ্ছে সেটি মূল বিষয়। বর্তমান আইন অনুসারে ২০১৯ সালে নিয়মিত নির্বাচনের সময় সরকার ও জাতীয় সংসদ বহাল থাকবে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে তা ২০১৪ সালের মতোই অর্থহীন হবে। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে সরকার সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য হবে। এজন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন ছাড়া নিয়মিত নির্বাচনে গেলে তা বিএনপির জন্য আত্মহত্যার সামিল হবে।
মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মহান বিজয় দিবস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা এ কথা বলেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা ফোরাম সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
বিশেষ আলোচক ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক।
স্বাধীনতা ফোরামের সহ-সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ বাবুলের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এলডিপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন ও অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, কৃষক দল নেতা শাজাহান মিয়া সম্রাট, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনির, জিনাফ সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, স্বাধীনতা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুল ইসলাম, যুবনেতা কাদের সিদ্দিকী, কৃষক দল শাহাবাগ থানা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক, দলীয় সরকারের অধীনে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী সরকারের অধীনে থাকলে ইসির স্বাধীনভাবে কাজ করা কঠিন। এজন্য নির্বাচনের সময় একটি সহায়ক সরকার থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ। আওয়ামী লীগ বলেছে তারা রাষ্ট্রপতি যা করবেন তা মেনে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও সুপারিশমালা দেয়া হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির উপর সবকিছু নির্ভর করছে।
এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হলে চলবে না, নির্বাচন কোনো সরকারের অধীনে হচ্ছে সেটি মূল বিষয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি করে জাতিকে একটি মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন উপহার দেন। এতে ২০১৪ সালে দেশের জনগন প্রতারিত হয়েছে। বর্তমান আইন অনুসারে ২০১৯ সালে নিয়মিত নির্বাচন হলে তখন সরকার ও জতীয় সংসদ বহাল থাকবে। তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে তা ২০১৪ সালের মতোই হবে। ওই নির্বাচনে যাওয়া অর্থহীন হবে। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে সরকার সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য হবে। এজন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৪ সালের মতো নিয়মিত নির্বাচনে অংশ নিলে তা আত্মহত্যার সামিল হবে। জনগণ ২০১৪ সালের মতোই প্রতারিত হবে।
তিনি বলেন, অনেকে বলেন বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছে, তাদের এ কথাটি সঠিক নয়। কারণ তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন ছিল যে বিএনপির এটা করা ছাড়া উপায় ছিলনা। দেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে অবিলম্বে সব দলকে নিয়ে সংলাপের আহবান জানান এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে যে প্রস্তাব দিয়েছে তা রাজনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র শক্তিশালী ইসি হলেই হবে না নির্বাচনের সুষ্ঠূ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বেগম খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ ইসি গঠনে যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা রাজনৈতিক দুরদর্শিতা। এখন সরকারের উচিত এটা মেনে একটি দল নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা। তিনি এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে বিগত সার্চ কমিটি গঠনের মত আচারণ না করে নিজের বিবেককে আরো জাগ্রত করার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আবু নাসের রহমাতুল্লাহ বলেন, সরকার লুই কানের নকশার বাস্তবায়নের কথা বলে মূলত শহীদ জিয়ার মাজার সরাতে চাচ্ছে। এটা তাদের চরম হীনমৈন্যতার পরিচয় ও রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। জনগন তাদের এ সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে।