চট্টগ্রামে র্যাবের অভিযানে বৃহস্পতিবার যে পাঁচ জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন নুরে আলম (২২)। তবে প্রায় আট মাস আগে অপহরণ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে তার পরিবার। নুরে আলমের মায়ের অভিযোগ, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল রাতে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে নীলফামারী শহরের উকিলের মোড় মহল্লার নিজবাড়ি থেকে নুরে আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০ মিনিট পরেই বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যাওয়া হবে বলে তুলে নেওয়া হয় নুরে আলমকে।
স্বজনদের দাবি, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের খবর টেলিভিশনে ছবিসহ দেখতে পেয়ে নুরে আলমকে শনাক্ত করেন তারা।
নুরে আলম নীলফামারী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও জেলা শহরের পৌর এলাকার উকিলের মোড় মহল্লার মৃত. আব্দুল কাদের ওরফে ইয়াকুব আলীর ছেলে। পাশাপাশি তিনি উকিলের মোড় দারুস সালাম হাফেজিয়া মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং উকিলের মোড় বাসভবনের সামনে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোবাইলের ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ এজেন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান পরিচালনা করতেন।
নুরে আলমের ছোট ভাই কামরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় আট মাস ধরে ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের পরিবারের কারও কোনও যোগাযোগ নেই। তার কোনও সন্ধানই পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় মা থানায় প্রথমে জিডি এবং পরে আদালতের মাধ্যমে অপহরণের মামলা দায়ের করেছিলেন।’
নুরে আলমের মা নূর নাহার বেগম জানান, ‘আমার ছেলে চট্টগ্রামে ধরা পড়েছে এটি টেলিভিশনের খবর ও ছবি দেখে জানতে পেরেছি।’ তিনি আরও জানান, ১১ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে তিনটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটর গাড়িতে প্রায় ৪০ জন সাদা পোশাকের লোক তাদের উকিলের মোড় বাসভবনে আসে। তিনি বলেন, ‘পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে জানায়, তারা প্রশাসনের লোক। ২০ মিনিট পর দিয়ে যাবে বলে আমার ছেলেকে নিয়ে যায়। থানায় আমরা ফোন করতে চাইলে আমাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।’
নুরে আলমের মা আরও জানান, ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার পর রাতেই স্থানীয় থানা ও র্যাব ক্যাম্পে যোগাযোগ করলে তারা কিছু জানেন না বলে তাকে জানায়। এ ঘটনায় তিনি গত ১২ এপ্রিল নীলফামারী থানায় একটি জিডি (নম্বর ৫৯৫) এবং ১৪ এপ্রিল নীলফামারী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি অপহরণের পিটিশন মামলা (নং-৩০/১৬) দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের ওই পিটিশনটি নীলফামারী থানায় অগ্রগতি করলে সেটি ১৯ এপ্রিল নীলফামারী থানায় অপহরণ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয় (মামলা নং-১১)।
এছাড়া ১৯ এপ্রিল নুরে আলমকে অপহরণের অভিযোগ তুলে নীলফামারী সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের কলেজের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় চৌরঙ্গী মোড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। তারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও দেয়।
জানা যায়, মা নূর নাহারসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের নিজ বাসভবনে নুরে আলমকে ফিরে পেতে গত ১৩ জুন সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে নুরে আলমের মা উল্লেখ করেছিলেন, তার ছেলে যদি কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে বাংলাদেশের আদালতে তার বিচার হোক। এতে আদালতের যে কোনও রায় তারা মেনে নিতে প্রস্তুত।
এ ব্যাপারে, নীলফামারী সদর থানার ওসি মো. বাবুল আকতার বলেন, ‘চট্রগ্রামে র্যাবের অভিযানে আটক নুরে আলম গত আট মাস আগে নীলফামারীর উকিলের মোড় থেকে নিখোঁজ হয় বলে তার পরিবারের লোকজন নিশ্চিত করেছেন।’
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজির) পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে আটক করে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, ১৬৭ রাউন্ড গুলি, সাতটি ম্যাগাজিন, ১২টি (আইইডি) ইমপ্রোভাইজ এক্সক্লুসিভ ডিভাইস, তিনটি চাপাতি, তিনটি ছুরি ও বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ঝিনাইদহের হাফেজ মো. আবু যর গিফারী (২২), নীলফামারীর মো. নুরে আলম ইসলাম (২২) ও রংপুরের শেখ ইবতিসাম আহমেদ ওরফে সামী (২৩), ফরিদপুরের মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম ও যশোরের মো. নাজিম উদ্দিন (৩৮)।