ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবৈধ ক্ষমতার লিপ্সা সরকারকে অন্ধ করে রেখেছে, তারা সত্যকে উপলব্ধি করতে পারছে না। উটপাখির মতোই সত্যকে তারা লুকিয়ে রাখছে।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের উদ্যোগে ১৯৭৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তানোরে নিহত শহীদ বিপ্লবীদের স্মরণে আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন তার সরকার বিনা বিচারে হত্যায় বিশ্বাস করে না। যদি কেউ এটা করে, সেটা যদি তাদের নজরে আনা হয়, চরম অ্যাকশন নেয়া হবে, কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আমরা দেখছি, প্রতিদিন বিনাবিচারে হত্যা করে ফেলে রাখা হচ্ছে, বলা হচ্ছে ক্রসফায়ারে মারা গেছে- কোনো বিচার নেই, গুম করে দেয়া হচ্ছে, কোনো বিচার নেই, জঙ্গির নাম করে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে- কোনো বিচার নেই।
তিনি বলেন, সরকারি দল বা সরকারের মন্ত্রীরা যদি উটপাখির মতোর সত্যকে লুকিয়ে রাখার জন্য বালুর মধ্যে মাথা ডুবিয়ে রাখেন, তাতেতো ঝড় থেমে যাবে না। আজকে এরা সত্যকে লুকিয়ে রাখতে চাইছেন, এড়িয়ে যেতে চাইছেন, জনগনের যে ক্ষোভ-দূঃখ-বেদনা-যন্ত্রণা, তাকে এড়িয়ে গিয়ে জনগনকে পুরোপুরি বোকা বানাতে চাচ্ছেন। এতে করে শেষ রক্ষা করা যায় না, ইতিহাস তা বলে না।
‘গুম’ হওয়ার বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গত তিন বছরে ৪২২ জনকে গুম করে দেয়া হয়েছে, তাদের কোনো খবর নেই। এভাবে শত শত মানুষ গুম করা হয়েছে। ২০১৩ সালে আমাদের ছাত্র নেতা পিন্টুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমরা অসংখ্যবার তাদের কথা বলেছি, তাদের পরিবারকে মিডিয়ার সামনে এনেছি। তাদের কথা প্রচার করার পর গোটা জাতি কেঁদেছে। তবুও এদের বিবেক জাগ্রত হয় না। এরা তাদের অবৈধ ক্ষমতার যে লিপ্সা আজকে তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছে, তারা সত্যটাকে উপলব্ধি করতে পারছে না।
পৃথিবী পাল্টাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমর গণতন্ত্র চাই, আমরা মানুষের মতো বেঁচে থাকতে চাই। শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক লোকের বেঁচে থাকার জন্য সাধারণ মানুষকে শোষিত হতে দিতে চাই না।
দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়-হারানো গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্যই ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়েছে, যদিও জোটে মত ও আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। কেননা, বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনের সাথে জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের দর্শনের মিল নেই। আবার সাম্যবাদী দলের সাথে জাগপার দর্শনেরও মিল নেই। জামায়াতের আদর্শ আবার ভিন্ন। কিন্তু একটা জায়গায় সবার মিল আছে। জনগণের বিরুদ্ধে এই সরকার, যারা গণতন্ত্র, বাক-ব্যক্তি-সংগঠন করার স্বাধীনতা ও ভোটাধিকারসহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যই আমরা এক হয়েছি।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপ-ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।