ক্রাইমবার্তা রিপোট:মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল সোমবার। এই মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
ভাসানীর জন্মবাষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মজুলম জননেতা ভাসানী। তার বাবার নাম হাজী শরাফত আলী খান। জীবনের শুরুতে মক্তবে শিক্ষা গ্রহণ এবং মক্তবেই কিছুকাল শিক্ষকতা করেন। অল্প বয়সেই আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা শাহ নাসিরউদ্দিন বোগদাদী (রহ:)-এর সংস্পর্শে এসে তিনি নতুন জীবনবোধে অনুপ্রাণিত হন। ইসালামি শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯০৭ সালে উপমহাদেশের বিখ্যাত কওমি মাদরাসা দেওবন্দে অধ্যয়ন শুরু করেন তিনি।
খালেদা জিয়ার বাণী
এদিকে ভাসানীর জন্মবার্ষিকীতে দেয়া এক বাণীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চরম সঙ্কটাপন্ন। গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানো হয়েছে। আধিপত্যবাদ আজো ডানা বিস্তার করে রেখেছে। কারণ ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচন করে গণতন্ত্রবিনাশী আধিপত্যবাদের শিখণ্ডি উৎপীড়ক শাসকশ্রেণী জনমতকে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করে ক্ষমতা জবরদখল করে রেখেছে। আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার প্রথম তুর্যবাদক মওলানা ভাসানীর উদ্যোম ও সাহসিকতাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলেই আগ্রাসী শক্তিকে আমরা রুখতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ্।
তিনি ভাসানীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সব স্বৈরশাসকের অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা এবং দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক মজলুম জননেতা মরহুম মওলানা ভাসানীর অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। রাজনৈতিক জীবনে তিনি আজীবন শোষিতের পক্ষ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীকে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
বেগম জিয়া বলেন, তিনি নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল সময় থেকেছেন আপোষহীন নেতৃত্বের ভূমিকায়। দেশ ও জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মরহুম আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বলিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা আমাদেরকে চিরদিন একটি শক্তিশালী এবং আত্মনির্ভশীল দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে প্রেরণা ও উৎসাহ যোগাবে। তার প্রদর্শিত পথ ধরে চলতে পারলেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোনো কঠিন বাধাই আমাদের পথ আগলাতে সক্ষম হবে না।
এদিকে ভিন্ন এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মওলানা ভাসানী ছিলেন আফ্রো-এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর। তার কণ্ঠে উচ্চারিত হতো বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের দাবি। তিনি ছিলেন মজলুমের বন্ধু, সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ এবং অত্যাচারী শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক আপোষহীন যোদ্ধা।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে প্রেরণা জোগাবে, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। আজকে এই দিনে আমি মওলানা ভাসানীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিবেদিত হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাই।
ন্যাপ-ভাসানীর কর্মসূচি
এদিকে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ন্যাপ-ভাসানী।
সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম আগামীকাল সকালে ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল নোমানসহ অন্যরা। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানার মাজার জিয়ারত।
বাংলাদেশ ন্যাপ
এছাড়াও ভাসানীর জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ন্যাপ এক বিবৃতিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বিবৃতিতে বলেন, আজীবন সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সমগ্র জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন চির বিপ্লবী মওলানা ভাসানী। ভারতীয় আধিপত্যবাদী-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম, প্রবীন বয়সে ১৯৭৬ সালের ফারাক্কা লংমার্চ-সহ ইতিহাসের প্রতিটি বাকে তিনি আছেন। যদিও তার জন্ম দেয়া আওয়ামী লীগ ও তার আদর্শ ব্যবহারকারী রাজনৈতিক দলগুলো কেউ তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারেন নাই। বরং শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা আর অনাদরের কারণে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে মুছে ফেলতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী সাম্রারাজ্যবাদী আর আধিপত্যবাদী শক্তির দোষররা। মওলানা ভাসানীর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় যথাযথভাবে পালনের জোর দাবি জানান নেতৃদ্বয়। বাংলাদেশ ন্যাপের উদ্যোগে আজ যাদু মিয়া মিলনায়তনে স্মরণসভা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।