মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে খালেদা জিয়ার পূর্ণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই প্রস্তাব ইসিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়তা করবে বলেও রাষ্ট্রপতি মনে করেন।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এই অভিমতও প্রকাশ করেন যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আলোচনা ও সংলাপের কোনও বিকল্প নেই। এই সমস্যার সমাধানও আলোচনার মাধ্যমে হতে হবে বলে তিনি মত দিয়েছেন।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তিনটি মূল প্রস্তাব ছিল আমাদের আলোচনায়। একটি হচ্ছে বাছাই কমিটি গঠন, সেটা হতে হবে নিরপক্ষে ও সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনে যারা থাকবেন, তারাও যেন নিরপেক্ষ থাকেন। তৃতীয়ত, আরপিও সংশোধনের বিষয়টি। শক্তিশালী ইসি গঠন করতে হবে, সেটিও আলোচনায় ছিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কী পদ্ধতিতে বাছাই কমিটির সদস্যদের মনোনীত করব, আমরা তাও বলেছি। রাষ্ট্রপতি এই পদ্ধতিগুলোর বিষয়ে পরীক্ষা করবেন। আজই প্রথম রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি। রাষ্ট্রপতিও আমাদের বলেছেন, যেহেতু আপনারাই প্রথম রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ চেয়েছেন, আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সেজন্যই আমি আপনাদের প্রথম ডেকে আপনাদের অভিমত প্রাথমিকভাবে বিবেচনার জন্য শুনেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি মনে করেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এজন্য সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনও তিনি আশা করেন। সবাই এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাছাই কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খালেদা জিয়া তার সুনির্দিষ্ট অভিমত রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছেন। আশা করছি, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করবেন। এরপর পুনরায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। যখন তিনি পদ্ধতিগত বিষয়টাকে পরিপূর্ণ করবেন। আমরা আশা করছি, চলমান এই আলোচনা আগামী মাসের মধ্যে শেষ হবে।’
বাছাই কমিটির নাম প্রস্তাব বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া সুনির্দিষ্টভাবে অভিমত দিয়েছেন। ১৮ নভেম্বর প্রদেয় খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা এই আলোচনা স্থায়ী হয়। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উষ্ণ আমেজে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ আন্তরিকতায় খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান। বৈঠকে খালেদা জিয়ার এক মাস আগে উত্থাপিত বিষয়গুলোই রাষ্ট্রপতির সামনে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হয়।’
বৈঠক থেকে বের হয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি প্রয়োজনে আবারও আমাদের ডাকবেন বলে জানিয়েছেন। আমাদের ছাপানো প্রস্তাব তাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি আমাদের কথা ভালো করে শুনলেন। তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আরও যাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার, তাদেরও তিনি ডাকবেন।’
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘খালেদা জিয়া সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন।’ তবে নাম প্রকাশ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো রাষ্ট্রপতিকে চাইতে হবে।’
এর আগে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল। রবিবার বিকেল ৪ টা ২৬ মিনিটে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় বিকেলে সাড়ে ৫টায়।
প্রতিনিধি দলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়া প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রয়েছেন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার ও ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রাহমান শিমুল বিশ্বাস। এছাড়া ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুর উদ্দিন আহমদ বঙ্গভবনে ঢুকতে পারেননি।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর বিএনপিসহ ৫টি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে আলোচনার জন্য বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শুরু হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর রবিবার। এছাড়া ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) (ইনু) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে গত ১৮ নভেম্বর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইসি গঠনের প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রকিব কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। প্রস্তাবে খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, কাদের নিয়ে গঠিত হবে, বাছাই কমিটি, বাছাই কমিটির কাঠামো, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে দলের বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরেন। এরপর এই প্রস্তাব নিয়ে জোর তৎপরতা চালায় বিএনপি। গত ৫ ডিসেম্বর বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি না পেলে বিকল্প পথে প্রস্তাব পৌঁছে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী দলের ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমিন চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বঙ্গভবনে প্রস্তাব দিয়ে আসেন গত সপ্তাহে। এর আগে গত ২০ নভেম্বর খালেদা জিয়ার প্রস্তাব জানাতে রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারকে ফোন করে সময় চেয়েছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর ২৩ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সময় চাওয়া হবে।’এ দিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মহাসচিবের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেন।