স্টাফ রিপোর্টার: রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদে মিয়ানমারের সীমান্ত অভিমুখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লংমার্চ কর্মসূচি পুলিশী বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা ফ্লাইওভারের নিচে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। সেখানে পুলিশী বাধার মুখে পড়ে তারা। পরে লংমার্চ করতে না পেরে দলটি পল্টনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের গেটে সমাবেশ করে। এর প্রতিবাদে আগামী ২৩ ডিসেম্বর জুমার নামাযের পর সব জেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দপ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম সাংবাদিকদের বলেন, ‘লংমার্চে পুলিশের বাধা দেয়ার প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে নেতাকর্মীদের জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেন দলের আমীর মুফতি রেজাউল করিম। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের দলের কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। গাড়ির চাবিও ছিনিয়ে নিয়েছে। গত শনিবার ডিএমপি কমিশনার প্রেসক্লাবে না করে কাঁচপুর থেকে লংমার্চ শুরু করতে বলেছিলেন। কিন্তু আজ রোববার তারা বাধা দিচ্ছে। ডিএমপির ওয়ারি জোনের উপকমিশনার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘লং মার্চের কোনও অনুমতি ছিল না। যে কারণে আমরা তাদের পথে আটকে দিয়েছি।
এদিকে, লংমার্চে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম কেন্দ্রীয় মসজিদের উত্তর গেটের সামনে দলটির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকলে সেখানে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দলটির নেতা-কর্মীরা জোহরের নামাযের আগ পর্যন্ত সেখানে কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে, হঠাৎ করেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসায় পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ যানজট পেপ্রসক্লাব, বিজয়নগর, সচিবালয়, গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বিপুলসংখ্যক রাজধানীবাসী ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তবে কর্মসূচি শেষে পল্টন-মতিঝিল সড়ক চালু হওয়ায় তা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে অবস্থান নিয়ে পপ্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ-সমাবেশের পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়ম মুহম্মদ রেজাউল করীম বলেন, সরকার এই লংমার্চে বাধা দেবে- এটা তারা কল্পনাও করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনি যখন আপনার পরিবারের বেদনাবিধুর ইতিহাস বর্ণনা করেন তখন আপনার চোখ দিয়ে পানি ঝরে। আজকে রোহিঙ্গাদের এভাবে কচুকাটা করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে- আপনার মনে একটুও ব্যথা নেই, আপনার এই আচরণকে আমরা ধিক্কার জানাই।
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনা অভিযান। এরপর থেকে সহিংসতায় বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন, নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বর্বোরিচত কায়দায় রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর হামলা চালানো হয়। আগুনে পুড়ে হত্যা করা হয়। বাড়িঘরে অগ্নি সংযোাগ করা হয়। সহিংসতা থেকে বাঁচতে অন্তত ২৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জাতিসংঘের তথ্য। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে নির্যাতন বন্ধ ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তাদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান করা হলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর হত্যা, নির্যাতন বন্ধ করা, বাংলাদেশে আশপ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া এবং রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনসহ কয়েকটি দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম এই লংমাচের্র ঘোষণা দেন।
যাত্রাবাড়ী থেকে গাড়িতে করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগপ্রাম, কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে পথসভা করারও ঘোষণা দেন তিনি। সে অনুযায়ী দলটির নেতাকর্মীরা সকাল থেকে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে জড়ো হতে শুরু করলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্টন মোড়সহ আশপাশের কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের সাঁজোয়া যান, জল কামান ও রায়টকারও পপ্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। বায়তুল মোকাররমে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, লংমার্চে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় আসার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তাদের কর্মীরা।
ইসলামী আন্দোলন চকবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, তারা তিনটি গাড়ি নিয়ে যাত্রা করার পথে চকবাজার থানাপুলিশ তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। বরগুনা থেকে আসা হান্নান মুন্সী বলেন, কাঁচপুর, শনিরআখড়া এলাকায় তাদের কর্মীদের বাধা দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে সংগঠনটির কর্মীরা বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমের আশপাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এ সময় তাদের অনেকের মুখে সরকারবিরোধী স্লোগানও শোনা যায়। পরে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত একটি খোলা ট্রাকে চড়ে সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা। পুলিশ লংমার্চে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও করেছে বলে অভিযোগ করেন রেজাউল করীম।