গাজীপুর সংবাদদাতা,১৯ডিসেম্বরঃ রাষ্ট্রপতি ও উন্মূক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শিক্ষার শুরু আছে, শেষ নেই। জীবনভর তা অর্জন করা যায়। নানা কারণে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত ও প্রচলিত পদ্ধতিতে পড়াশুনার সুযোগ নেই এমন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিয়ে উন্মুক্তবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের সুবিধামত সময়ে নিজস্ব প্রচেষ্টায় শিক্ষা গ্রহণের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগদান করে দেশকে দক্ষ জনগোষ্ঠি তৈরির ক্ষেতে এ বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি সোমবার বিকেলে গাজীপুরের বাংলাদেশ উন্মূক্ত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতির ভাষণে ওইসব কথা বলেন। এতে কমনওয়েলথ অব লার্ণিং (কানাডা)-এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক আশা কানওয়ার সমাবর্তন বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননান। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আজকের বিশ্বে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষন ব্যবস্থা নবদিগন্তের উন্মোচন করেছে। শিক্ষাদানে নানাবিদ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্মুক্ত শিক্ষা বিশ্বজুড়ে সকলের কাছে সমাদৃত হয়েছে। প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ব্যতিক্রমধর্মী প্রযুক্তিনির্ভর উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণভিত্তিক শিক্ষাকার্যক্রমের মাধ্যমে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার সমন্বয়েই জীবনে পরিপূর্ণতা আসে। শিক্ষার লক্ষ কেবল ডিগ্রী অর্জন নয়, চাকরি বা কর্মজীবনে ভাল উপার্জন নয়, প্রকৃত অর্থে একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হওয়া। যেখানে প্রবাহমান ধারার সাথে নৈতিকতা, আদর্শ ও দেশ প্রেমের মত গুনাবলীর প্রতিফলন ঘটবে। অন্ধকার আর ক’পমন্ড’কতার বেড়াজাল ভেঙ্গে অনির্বান আলো আর জ্ঞান-বিজ্ঞান ভাস্বর হয়ে উঠবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে। পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমিত না থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গড়ে তুলতে হবে প্রকৃত জ্ঞান চর্চার শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে।
তিনি বলেন, স্বাধীন দেশের মাটিতে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ’এবারের সংগ্রাম দেশ গড়ার সংগ্রাম। শিক্ষিত জনশক্তি দেশের সম্পদ আমি বাংলাদেশের এমন ব্যবহারিক শিক্ষার প্রসার চাই, যা দ্বারা প্রতিটি নাগরিক দেশের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ি নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।’ আমরা আজ সেই সংগ্রামে অবতীর্ণ। শিক্ষাই এই সংগ্রামে আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। শিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ক্ষুধা, নিরক্ষমুক্ত এবং দূর্নীতিমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বঙ্গবন্ধু যে ’সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বহুমুখী পন্থায় সর্বস্তরের শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্প্রসারণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাকে বহুমুখিকরণের মাধ্যমে সর্বসাধারণের নিকট শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিয়ে জনগণের শিক্ষার মান উন্নীত করে দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করার লক্ষ ও উদ্দেশ্যেই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ৫ হাজার ১০জনকে ¯œাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এরআগে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছালে উপাচার্য, বোর্ড অব গভর্নরস ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যগণ তাকে অভ্যর্থনা জানান। রাষ্ট্রপতি ও অন্যান্য অতিথিরা সমাবর্তন গাউন পড়ে শোভাযাত্রাসহকারে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন।
###