রাখাইনে বেআইনিভাবে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও ধর্ষণ করছে সৈন্যরা : অ্যামনেস্টি

ক্রাইমবার্তা রিপোট:১৯ ডিসেম্বর ২০১৬,সোমবার, ০৯:৩৫

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী দেশটিতে বেআইনি হত্যাকাণ্ড, বহু ধর্ষণ, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক নতুন প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।

রোহিঙ্গা বিরোধী এক অভিযানের অংশ হিসেবে তারা একাজ করছে এবং অ্যামনেস্টি মনে করছে এসকল কর্মকাণ্ড মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল হতে পারে।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা সেনা অভিযান এবং এই অভিযান থেকে পালিয়ে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে সোমবার ভোরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ এবং ভিডিও ও ফটো-র ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে অ্যামনেস্টি।

সংস্থাটির দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা বিষয়ক পরিচালক রাফেন্দি ডিজামিন বলেন, “মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেসামরিক রোহিঙ্গাদেরকে অনুভূতিহীন ও নিয়মতান্ত্রিক সহিংসতার লক্ষ্যে পরিণত করেছে। একটি সমন্বিত শাস্তির অংশ হিসেবে সেখানে পুরুষ, মহিলা, শিশু, পুরো পরিবার, পুরো গ্রামের উপর হামলা হয়েছে এবং নির্যাতন করা হয়েছে।”

এই ইস্যুতে অং সাং সুচি তার রাজনৈতিক এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

পুরো রাখাইন রাজ্যের আকাশে এরকম হেলিকপ্টার গানশিপের টহল নাফ নদীর এপারে বাংলাদেশ থেকেও দেখা গেছে।

উদাহরণ হিসেবে ১২ নভেম্বরের একটি ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিজ্ঞপ্তিতে। যেখানে বলা হয়, সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে মোতায়েন করা দুটি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে নির্বিচারে গুলি চালায়, আতঙ্কে গ্রামবাসী পালাতে থাকে, এই হামলায় অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ মারা যাযন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অবশ্য রাখাইন রাজ্যে তাদের ভাষায় ‘বাঙ্গালী’ দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, যারা গত ৯ অক্টোবর পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।

এই সেনা অভিযানে ৮০ জনের মত মানুষ নিহত হয়েছেন বলে তারা স্বীকার করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে প্রতিবেদন দিচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি, যদিও তারা নিহতের বাস্তব কোন সংখ্যা নিরূপণ করতে পারেনি।

সেনাবাহিনী মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন করেছে বলেও অ্যামনেস্টি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
সেনা সদস্যদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন, এমন কয়েকজন মহিলার সাক্ষাৎকারও নিয়েছে বলে জানাচ্ছে অ্যামনেস্টি।

৩২ বছর বয়সী এক মহিলা জানান, একটি ধানক্ষেতে টেনে নিয়ে গিয়ে তিনজন সেনাসদস্য তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করেছে।

এছাড়া রয়েছে নির্বিচার গ্রেফতারের অভিযোগ।

আটকের পর কারাগারগুলোতে তারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন- এমন নজিরও পাওয়া যাচ্ছে।

আটক থাকা অবস্থায় অন্তত ছয়জন বন্দী মারা যাওয়ার খবর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমই স্বীকার করেছে।

আটক করবার সময়েও রোহিঙ্গাদেরকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয় বলে উল্লেখ করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।