নিহত রাষ্ট্রদূতের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমার সঙ্গে (ভ্লাদিমির) পুতিন সম্মত হন যে এটি (রাষ্ট্রদূত হত্যাকাণ্ড) উসকানিমূলকভাবে করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমারও দ্বিমত নেই যে, আমাদের মধ্যে বিভক্তির জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সোমবার রাষ্ট্রদূত হত্যাকাণ্ডের পর পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর এক টেলিভিশন বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
এরদোগান বলেন, পারস্পরিক সংহতির জন্য আমরা উভয়ই সম্মত হয়েছি।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করে এরদোগান বলেন, আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
পুতিন বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ সুদৃঢ় করার কারণেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে-জানান এরদোগান।
রুশ টেলিভিশনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ‘তুর্কিদের চোখে রাশিয়া’ শিরোনামে আংকারায় একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে এক গ্যালারিতে গিয়েছিলেন কার্লভ। ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় এক বন্দুকধারী পেছন থেকে তার দিকে কয়েক দফা গুলি চালায়। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
এএফপির খবরে বলা হয়, এ সময় বন্দুকধারী ‘আলেপ্পোর প্রতিশোধ’ বলে চিৎকার করে এবং আল্লাহ আকবর বলে স্লোগান দেয়। হামলাকারী এক স্মার্ট যুবক। তার পরনে ছিল স্যুট ও টাই। ঘটনার পর বিশেষ বাহিনীর অভিযানে হামলাকারীও নিহত হন।
আঙ্কারার মেয়রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, হামলাকারী ম্যার্থ আলটিন্তাস ( ২২) একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি দাঙ্গা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তবে কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক ছিল কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে ওই সময় তিনি ডিউটিতে (দায়িত্বরত) ছিলেন না।
কার্লভ ২০১৩ সাল থেকে তুরস্কে রুশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘অসাধারণ এ রুশ কূটনীতিক সন্ত্রাসবিরোধী কাজে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের হৃদয়ে চির জাগরুক থাকবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, তারা রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। এ সহিংস কাণ্ডের নিন্দা জানান তারা। নিহত রাষ্ট্রদূতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান কিরবি।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে রক্ষায় গতবছর সরাসরি যুদ্ধে নামে রাশিয়া। এতে আসাদ দৃশ্যত টিকে গেলেও সেখানে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। এজন্য রাশিয়াকে বহুলাংশে দায়ী করা হয়। তুরস্ক প্রায় ৩০ লাখ সিরীয়কে আশ্রয় দিয়েছে। কয়েক মাস আগ পর্যন্ত সিরিয়া নিয়ে আংকারা ও মস্কোর মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্প্রতি আলেপ্পোয় যুদ্ধ বন্ধে তারা সহযোগিতা করে।
রুশ সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবহিত করা হয়েছে।
তুর্কি সংবাদ মাধ্যম হুরিয়েত ডেইলি জানিয়েছে, বন্দুকধারী প্রথম ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে ভয়ে লোকজন সরে গেলে সে রাষ্ট্রদূতকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। এ ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, নিহত রুশ আন্দ্রেই কারলভ ১৯৭৬ সাল থেকে কূটনৈতিক অঙ্গনে কাজ করেছেন। ২০১৩ সাল থেকে তুরস্কে রুশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।