ক্রাইমবার্তা রিপোট:আদম ব্যাপারীর খপ্পরে প্রায় ১ মাস আফ্রিকার জঙ্গলের জিম্মি থাকার পর কৌশলে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন ফরিদপুরের আজিজুর রহমান ও তৈয়াব মোল্যা। আজ বুধবার তারা দু’জনে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের জিম্মি দশার ভয়াবহ কাহিনী শোনান।
এদের মধ্যে আজিজুরের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বারাশুর গ্রামে এবং তার শ্যালক তৈয়বের বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামে। কানাডা পাঠানোর কথা বলে আফ্রিকার জঙ্গলে নিয়ে তাদের জিম্মি করা হয়।
এব্যাপারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াদিগন্তে ‘দালালের খপ্পরে পড়ে আফ্রিকার জঙ্গলে জিম্মি ফরিদপুরের ২ ব্যক্তি’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রায় ১ মাস জিম্মি দশায় থাকার পর তারা কৌশলে মুক্ত হয়ে গত ১০ অক্টোবর তারা দেশে পৌঁছতে সক্ষম হয়।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আজিজুর ও তৈয়ব জানান, ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে তাদের বিমানযোগে কানাডা যাওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কয়েকটি ট্রানজিট করে তাদের নেয়া হয় আফ্রিকার মোজাম্বিকে। সেখানে দালালদের নিয়োজিত লোকেরা একটি অন্ধকার রুমে তাদেরসহ ৬/৭ জনকে আটকে রাখে। খাবার কিংবা পানি কিছু দিত না। তিনদিন পর তাদের একটি গাড়িতে করে উচু নিচু পাহাড়ি পথ ডিঙিয়ে একটি জিপে করে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের সাথে আরো ১৪ জন বাঙালি ছিল। সেখানে সারাদিনে একবার মাত্র ভাত আর আলুসেদ্ধ দিত। আর বাঁচতে চাইলে বাড়ি থেকে টাকা পাঠানোর জন্য বলতো। সেখানে সবাইকে গাদাগাদি করে থাকতে হতো। শীতের রাতে ২/৩ ঘন্টা খালি গায়ে রেখে দিত। কথায় কথায় মারধর করতো। কাঠের বাটাম, পানির পাইপ দিয়ে পেটাতো। দিনের পর দিন খাটের সাথে হাত পা বেঁধে রাখা হতো। তাদের দিয়ে বাথরুম ও টয়লেট পরিষ্কার করানো হতো। এতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এভাবে প্রায় ২২/২৩ দিন চলার পর একদিন আটককারীদের মাত্র একজন সেখানে ছিল। ওই ব্যক্তি বাথরুমে গেলে বাথরুমের দরজা আটকিয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একজন বাংলাদেশীর সন্ধান পান। তাকে সবকিছু খুলে বলার পর তাদেরকে বাড়ির পেছনের একটি ছোট ঘরে আশ্রয় দেয়া হয়। এরপর সবাই মিলে চাঁদা তুলে দেশে ফিরতে সক্ষম হন।
সংবাদ সম্মেলনে আজিজুর ও তৈয়ব দাবি করেন, কানাডা পাঠানোর নাম করে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৪২ লাখ টাকা নিয়েছে হাবিব নামে এক দালাল। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।