ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :২০০৬ সালের ঈদ-উল আযহার দিন সকালে সাদ্দাম হুসেইনের মেয়ে রাঘাদ সাদ্দাম হুসেইন তার বোন ও তাদের সন্তানদের নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলেন। আম্মানে নিজ বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে বসে সেদিন দেখেছিলেন তার বাবাকে ফাঁসির কাষ্ঠে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য; যে কাষ্ঠে সাদ্দাম হুসেইনকে ঝোলানো হয়েছিল।
১৯৭৯ সাল থেকে দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্ষমতাচ্যুত ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্যদের হাতে আটক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইরাক শাসন করেছেন সাদ্দাম। দড়ি গলায় জড়ানোর আগে মাথায় ফাঁসির টুপির পড়তে অস্বীকার করেছিলেন তিনি; চোখের কোণেও ছিল না পানি। ইরাকের একটি টেলিভিশন চ্যানেল এ পর্যন্তই ঘটনার দৃশ্য দেখিয়েছিল। কিন্তু মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করা দ্বিতীয় একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদ্দাম হুসেইনের মৃত্যুর দৃশ্য। ফাঁসি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টার মাথায় ওই ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
১০ বছর আগে বাবার ফাঁসি কার্যকরের পর এই প্রথম গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন সাদ্দাম হুসেইনের মেয়ে রাঘাদ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাদ্দাম হুসেইনের ফাঁসির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ওই দৃশ্য কখনোই দেখিনি এবং এটি দেখতেও চাইনি।’
১৯৮২ সালে ইরাকের ১৪৮ শিয়াকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল সাদ্দামের বিরুদ্ধে। রাঘাদ হুসেইন তার বাবার ফাঁসিকে সম্মানজনক বিদায় বলে মন্তব্য করেছেন। জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে সিএনএনকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার মৃত্যুর বিবরণ অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং বেদনাদায়ক; তবুও এটি সম্মানজনক মৃত্যু। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর থেকে আম্মানে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
রাঘাদ হুসেইন বলেন, আমি মনে করি না, তার চলে যাওয়া এরচেয়েও মহৎ হতে পারতো। কারণ তিনি এমন এক ধরনের মৃত্যুকে বরণ করেছেন; যা আমাকে, আমার বোনকে এবং তাদের সন্তানকে গর্বিত করেছে। এ ছাড়া যারা তাকে ভালোবাসতেন তাদেরকেও গর্বিত করেছে এবং তাদের হৃদয়ে রয়েছেন তার জন্য একটি জায়গা রয়েছে। সাদ্দাম হুসেইনের মৃত্যুর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, ‘ইরাকি জনগণের দৃঢ় সংকল্প ছাড়া সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকর করা সম্ভব ছিল না।’
আফগানিস্তানে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন রাঘাদ। তার প্রত্যাশা উত্তরসূরীদের চেয়ে ব্যতিক্রম হবেন নর্বনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাঘাদ বলেন, এই মানুষটি মাত্রই ক্ষমতায় গেছেন…আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে; রাজনীতি সম্পর্কে তার উচ্চ পর্যায়ের চেতনা রয়েছে; যা ব্যাপকভাবে তার আগের প্রেসিডেন্টের চেয়ে ব্যতিক্রম।