সাখাওয়াতের পরাজয়ের ব্যাখ্যা দিলেন গয়েশ্বর

ক্রাইমবার্তা রিপোট:নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের কোনো দাবি না জানালেও ভোটের ব্যবধানকে অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নাসিক নির্বাচনের সমন্বয় কমিটির প্রধান আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের ১৭৪টি কেন্দ্রে সরকার সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন এক লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোট। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৭`শ ভোট।

সাখাওয়াতের পরাজয়ের ব্যাখ্যা দিলেন গয়েশ্বর

গয়েশ্বর বলেন, নির্বাচনের ফলাফল অপ্রত্যাশিত। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। যারা আমাদের পোলিং এজেন্ট ছিলেন এবং যাদেরকে নির্বাচনে দায়িত্ব দিয়েছিলাম তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

নাসিক নির্বাচনে সরকার সমর্থিত প্রার্থী আইভীর জয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি প্রার্থীর পরাজয়ের সম্ভব্য নানা দিক নিয়ে তুলে ধরেন তিনি।

গয়েশ্বর বলেন, আমার নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা ১৯৭০ সাল থেকে। কোথাও ব্যর্থ হয়নি। এবারই ব্যর্থ হওয়ার নতুন অভিজ্ঞতা হলো। শেষ খেলাটা কী হবে এটা নিয়ে আমরা অবগত ছিলাম না। যখন কেউ অপকর্ম করে একই কৌশলে পরবর্তীতে আবার সেই অপকর্ম করে না। অজানা কৌশলের প্রশ্রয় নেয়। সেই অজানা কৌশলকে আবিষ্কার করতে হবে। এতে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, আমি লোকাল এজেন্টদের আবার ডাকবো। যদি এমন কোনো কথা তাদের থেকে থাকে যা নির্বাচনের আগে বলতে পারেনি সে কথাও শুনবো। আমাদের অভ্যন্তরে কোনো সমস্যা ছিল কি-না তাও বের করার চেষ্টা করবো।

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, দলের কিছু নেতা বেচাকেনা হয়ে থাকলেও ভোট এদিক সেদিক হওয়ার সুযোগ ছিল না। এমন কোনো ভোটার নেই যার কাছে যাইনি। ৮০ শতাংশ লোকের মুখে হাসি পেয়েছি। বুঝেছি আমাদের লাইনের লোক। বলেছিলাম আপনার ভোটটা আপনি যাকে ইচ্ছা দিয়েন। আপনার ভোট যাতে আরেকজন না দেয়।

তিনি বলেন, এবারই প্রথম দেখলাম টেলিভিশনে অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে ফলাফল প্রকাশ করছে। দেখেছি ৫ কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ফলাফলের পার্থক্য একই রকম গতিতে ছিল। ফলাফলে কখনোই আপ-ডাউন ছিল না। পার্থক্যটা একই রকম ছিল। কেন্দ্রে কম বেশি ভোট হয়। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম হয়েছে।

সংশয় প্রকাশ করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বাক্স আগেই ভরে রেখেছে এমন একটা সংবাদও আমার কাছে আসছে। একটা পারসেন্টেজ ভোট আগে থেকেই তারা হয়তো বাক্সে রেখেছে। মনে করেন দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার বিরতির সময় দুটি ব্যালট ভর্তি বাক্স হয়তো তারা রেখে এসেছে। এটা আপনি চাইলেও ধরতে পারবেন না। কারণ ব্যালট বাক্সের কোনো সিরিয়াল ছিল না।

তিনি বলেন, স্থানীয় নেতাদের মাঝে বৈরিতা থাকতে পারে। যতকিছুই থাকুক ভোটারের সঙ্গে ধানের শীর্ষের একটা সম্পর্ক ছিল। ধরুন, শামীম ওসমানের সঙ্গে অাইভীর দ্বন্দ্ব। তাই বলে আওয়ামী লীগের কেউ তো আর ধানের শীষে ভোট দেবে না। যত দ্বন্দ্ব থাকুক তারা নৌকাতেই ভোট দেবে।

আইভীর জয় নিশ্চিত হওয়ার পর জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার জাগো নিউজকে বলেছেন, নাসিকে বিএনপির ক্যান্ডিডেট নির্ধারণ কেন্দ্র থেকে করা হয়েছে। আমরা প্রার্থীকে সমর্থন দেইনি।

তৈমুরের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি হয়ে এমন কথা বললে এটা সাজে না। দায়িত্বশীল হিসেবে তিনি এমন কথা বলতে পারেন না। মেয়রপ্রার্থী হিসেব প্রথমে উনাকে অফার করা হয়ছে, একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কামালকে অনুরোধ করা হয়েছিল। তারা কেউ মেয়রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবে না এমনটাই বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা বলা যায় না। স্থানীয় এই তিন নেতার সঙ্গে মেয়র পদে মনোনয়নের বিষয়টি নিয়ে তিন দিন আলোচনা করেছে।

দলীয় প্রার্থীকে অসহযোগিতার প্রমাণ মিললে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে নাসিক নির্বাচনে দলের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা বলেন, কম হোক বেশি হোক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। আমার তো মনে হয় জবাবদিহিতা থাকা উচিত। এমনকি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে আমি ছিলাম। আমারও যদি কোনো স্থানে নেগলেজেন্সি থাকে এটাও পার্টির উচিত অনুসন্ধান করা।

অভিজ্ঞতা বর্ণনার দিতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, আমি রাজনীতি করতে গিয়ে যেটা বুঝি আজকে হয়তো এই ব্যর্থতার দায় কেউ নেবে না। আমাকে তো নিতে হবে নাকি। উন্নত দেশ হলে হয়তো এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে আমি অন্য কিছু করতাম। এখন যদি অামি অন্য কিছু করতে চাই। তাহলে নানাভাবে এটার বাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অনেকে পজিটিভলি না নিয়ে নেগেটিভ নেবে।

ব্যর্থতার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা অতীত অভিজ্ঞতা সবকিছু কাছে লাগিয়েছি। নির্বাচনের আগের দিন থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রে যোগাযোগ করেছিলাম। এক থানায় দায়িত্ব ছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার, বাকি দুই থানায় ছিলেন গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম। আমার হাতে কোনো দায়িত্ব রাখি নাই। তবে আমি দায়িত্ব আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করেছি। যেসব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ছিল না খবর পেয়ে পোলিং এজেন্টদের বসিয়েছি। অনেকস্থানে পরিবর্তন এনেছি। তারপরও কেম ফলাফল এতটা অপ্রত্যাশিত হলো তার প্রকৃত কারণ উৎঘাটনে আমরা দ্রুতই কাজ শুরু করবো।

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা:সাতক্ষীরা জেলা আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১০ নভেম্বর) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।