ক্রাইমবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক:মাশরাফিরা পরশু ক্রাইস্টচার্চে নেমেছেন বৃষ্টি মাথায়। কিন্তু কাল যখন তাঁরা হ্যাগলি ওভালে অনুশীলন করলেন, বৃষ্টির উপদ্রব আর নেই! সিডনি, ওয়াঙ্গারেই হয়ে ক্রাইস্টচার্চ—তিন পর্বের প্রস্তুতি শেষে বাংলাদেশ দল এখন মাঠের লড়াইয়ের অপেক্ষায়। হ্যাগলি ওভালে কাল বক্সিং ডেতে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে এবারের নিউজিল্যান্ড অভিযান শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের।
আগের সব সফরেই বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরেছে শূন্য হাতে। ২০০১ সালে সফরের দুটি টেস্টেই হেরেছিল বাংলাদেশ। কোনো ওয়ানডে ছিল না সফরসূচিতে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে ২ টেস্ট ও ৩ ওয়ানডের সফরের প্রতিটিতে হার। ২০১০ সালে ১ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে ও ১ টি-টোয়েন্টিতেও পুরোনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। এমনকি গত বছর বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটিতে ২৮৮ রান করেও ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। কিউইদের মাটিতে হার, শুধু হার—এবার কি এই হারের বৃত্ত ভাঙতে পারবে বাংলাদেশ?
ভাঙতে পারবে কি না, সময়ই বলে দেবে। তবে বাংলাদেশ যে ব্যর্থতার ঘেরাটোপ থেকে বেরোতে চায়, গত দুই বছরে দেশের মাটিতে রচিত রঙিন সাফল্যের অনুবাদ করতে চায় বিদেশেও, সেটি পরিষ্কার। তাই নিউজিল্যান্ড যাওয়ার পথে প্রস্তুতি ক্যাম্প করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। বাংলাদেশের আগের নিউজিল্যান্ড সফরগুলোয় এমন উদ্যোগ খুব একটা দেখা যায়নি। যদিও সিডনির সঙ্গে ক্রাইস্টচার্চ কিংবা নেলসনের আবহাওয়া-পরিবেশ মিলবে না। এমনকি এক দেশের ভূখণ্ড হলেও ক্রাইস্টচার্চের সঙ্গে ওয়াঙ্গারেইয়ের কন্ডিশনও হুবহু এক নয়। তবু আগ থেকে প্রস্তুতি শুরু করার সবচেয়ে বড় সুবিধা, অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ হয়। তা সিরিজের আগে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন হলো? দলের ব্যাটিং পরামর্শক থিলান সামারাবীরা বেশ সন্তুষ্ট, ‘প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, উদ্দেশ্য ছিল প্রস্তুতিটা ভালোভাবে নেওয়া। সিডনি ও এখানে যতটুকু হয়েছে তাতে আমি খুশি।’
প্রস্তুতি নিয়ে সামারাবীরা খুশি হলেও বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে, সেগুলোর ফল বলছে ভিন্ন কথা। সিডনি সিক্সার্সের সঙ্গে বৃষ্টিবিঘ্নিত টি-টোয়েন্টিতে জিতলেও হেরেছে সিডনি থান্ডারের কাছে। এমনকি নিউজিল্যান্ড একাদশের সঙ্গে একমাত্র ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচেও হেরেছেন মাশরাফিরা। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কিংবা দলীয় স্কোরও খুব একটা বড় হয়নি। সিডনির দুটি টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়াঙ্গারেইয়ের ৫০ ওভারের ম্যাচ—একটি ফিফটিও আসেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। সামারাবীরা অবশ্য এতে ভাবনার কিছু দেখছেন না, ‘বড় স্কোর না হওয়ায় খুব বেশি উদ্বিগ্ন নই। এগুলো শুধুই প্রস্তুতি ম্যাচ। তবে এই কন্ডিশনে ভালো সূচনার জন্য আপনাকে যথেষ্ট ভালো হতে হবে। এখানে এসেই ভালো করা কঠিন। তবে দুই বছর ধরে আমরা ক্রমশ ভালো করছি। নিউজিল্যান্ডে সর্বশেষ বিশ্বকাপটা আমাদের দারুণ গেছে। ওদের (নিউজিল্যান্ডকে) অনেক বড় লক্ষ্য (২৮৯) দিয়েছিলাম।’
২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হ্যাগলি ওভালের। বাংলাদেশ সিরিজের আগে আটটি ওয়ানডে হয়েছে এই মাঠে। ৩০০ পেরোনো চারটি স্কোর থাকলেও নিউজিল্যান্ডের অন্য মাঠের মতো এখানেও দেখা গেছে পেসারদের দাপট। এ মাঠে চারটি ওয়ানডে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। চার ম্যাচের ৩৩ উইকেটই পেয়েছেন কিউই পেসাররা। এবারও সাউদি-বোল্টরা বড় পরীক্ষাই নেবেন সাকিব-তামিমদের। তবে সরাসরি হুমকিটা দিয়েছেন নতুন পেসার লকি ফার্গুসন। গতির ঝড় তুলে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ২৫ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার। প্রতিপক্ষের পেসারদের চ্যালেঞ্জ সামলে বাংলাদেশ যদি ২৫০-২৬০ রান করতে পারে, সেটি জয়ের জন্য যথেষ্ট মনে করছেন সামারাবীরা, ‘এই মাঠে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখে মনে হলো, এখানে ২৫৫-২৬০ অনেক বড় স্কোর। আমরা মনোযোগও দিচ্ছি এটার ওপর। কীভাবে বাউন্স ও গতি সামলে শুরুটা ভালো করা যায়, সেটি নিয়ে কথা বলেছি। বল পুরোনো হলে এখানে ব্যাটিং করা সহজ।’
ওয়েলিংটন, হ্যামিল্টন, নেপিয়ার, ডানেডিনের মতো নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত মাঠগুলো মাশরাফি-সাকিবদের বারবার মনে করিয়ে দেবে তাঁদের পুরোনো বিবর্ণ রেকর্ডগুলো। কিন্তু হ্যাগলি ওভালের সেই সুযোগ নেই! ক্রাইস্টচার্চে ২০১০ সালে বাংলাদেশ একটি ওয়ানডে খেললেও সেটি ছিল এএমআই স্টেডিয়ামে। নিউজিল্যান্ডের এই মাঠে প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন মাঠে নিউজিল্যান্ড-অধ্যায়টা নতুনভাবে কি শুরু হতে পারে না মাশরাফিদের?