ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর থেকে মোঃ রেজাউল বারী বাবুলঃ আমার ফুপি মারা যাওয়ার পর তার লাশের পাশে বসে আমার দাদুকে কাঁদতে দেখেছি। আমি তো আমার বাবার লাশের পাশে বসে কাঁদতেও পারলামনা? আমার বাবার জন্য মিলাদ পড়তে পাড়লামনা’ আমার বাবার জন্য কি কবর হবেনা? মাত্র সাত বছর বয়সের সিহাব গাজীপুর জেলা ত্রান ও পুনবাসন কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমানের সামনে তার রাজবাড়িস্থ অফিসে সোমবার কথাগুলো যখন বলছিলেন তখন অনেকের চোখ ভারি হয়ে আসছিল। টঙ্গীর টাম্পাকোতে নিখোঁজ নয় শ্রমিকের মরদেহর মধ্যে তার বাবা মেশিন অপারেটর আনিসুর রহমানের লাশ চিহ্নিত করতে তার মা শারমিন আক্তার শিল্পীর সঙ্গে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে এসে ওই কথা গুলো বলেন।
এছাড়া মাগুরা জেলার ছনপুর গ্রামের নিখোঁজ আজিম উদ্দিনের(৩৬) স্ত্রী পারভীন আক্তার, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার উপুলকি গ্রামের নিখোঁজ জহিরুল ইসলামের স্ত্রী নূরুন্নাহার, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার টঙ্কি গ্রামের বাসিন্দা নিখোঁজ মাসুম আহমেদের স্ত্রী রূপালী বেগম ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল জানতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ডিএনএ (ডি অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) টেস্টের জন্য নিখোঁজ ৯ জনের পরিবারের স্বজন ঢাকার সিআইডিতে রক্ত ও লালা দিয়েছিলেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, কয়েকটি ধাপে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ ডিএনএ পরীক্ষা করেন। সবেমাত্র প্রাথমিক ধাপটি শেষ হয়েছে। প্রাথমিক ধাপে পরিচয় শনাক্ত করা অনেকটাই সম্ভব হবে। আগামী ২০ জানুয়ারীর দিকে পরিচয় দেয়া যাবে। সিহাবকে শান্তনা দিয়ে তিনি বলেন, তোমার বাবার জন্য দোয়া করো। আমরা চেষ্টা করব তোমার বাবার লাশ শনাক্ত করে তোমাদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।
প্রসঙ্গত, ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীতে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানা বিধ্বস্ত হয়। এতে মারা যান ৩৯ জন আহত হন ৪০ জন। এদের মধ্যে ডিএনএ টেস্টের জন্য ৯ জনের পরিবারের স্বজন রক্ত ও লালা দিয়েছেন গত ২১ সেপ্টেম্বর।
ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, শিল্প মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মোট ৫টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। ট্যাম্পাকো মালিকের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন আইনে দুটি মামলা হয়েছে।
টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে জেল হাজতে রয়েছে। কারখানার মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেনকে আগামী বছরের ৪ জানুয়ারী পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন।
যাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে তারা হলেন মালিকের ছেলে ও কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ তানভীর হোসেন, মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) সফিকুর রহমান, উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিএমডি) সাফিউস সামি আলমগীর, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও আইন) আবু হানিফ।
টাম্পাকো ঘটনার দুই দিন পর টঙ্গী থানায় হত্যা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা হয়।
প্রথম মামলা ॥
টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী থানায় প্রথম মামলাটি দায়ের করা হয়। অগ্নিকান্ডে নিহত শ্রমিক জুয়েলের বাবা আবদুল কাদের বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় কারখানা মালিক মকবুল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলার অপর ৬ আসামি হলেন- মকবুল হোসেনের স্ত্রী মোসা. পারভিন, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, জেনারেল ম্যানেজার সফিকুর রহমান, ম্যানেজার (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান, ম্যানেজার (সার্বিক) সমির আহমেদ, ম্যানেজার হানিফ ও ডিএমডি আলমগীর হোসেন।
দ্বিতীয় মামলা॥
ট্যাম্পাকো অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দ্বিতীয় মামলাটি করেন টঙ্গী থানার উপ পরিদর্শক অজয় চক্রবর্তী। ১৭ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে কারখানা মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়াসহ এতে ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এ মামলায় মকবুল হোসেন ছাড়া অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন মকবুল হোসেনের স্ত্রী মোসা. পারভিন, কন্যা হাবিবা, জামাতা সফিউদ্দিন, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, জেনারেল ম্যানেজার সফিকুর রহমান, ম্যানেজার (প্রশাসন) মনির হোসেন, ম্যানেজার (সার্বিক) সমির আহমেদ, ম্যানেজার হানিফ ও ডিএমডি আলমগীর হোসেন।