ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক কতটা ধনি? সেই সম্পদের ভিত্তিই বা কী? ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সম্পদ নিয়ে বড়াই করে থাকেন, বিস্তারিত কিছু না জানিয়েই। তবে যেটুকু জানা গেছে, তা দৈনিক
ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল
আমাদের সময়ের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো..
ট্রাম্পের সম্পত্তি নিয়ে কথা উঠলে প্রথমে কিছুটা ধাঁধা লাগে। তার ধনসম্পদ সম্পর্কে কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার অভিযান থেকেও কোনও বিশদ খবরাখবর পাওয়া যায়নি। কারণ ট্রাম্প অপরাপর প্রার্থীদের মতো তার আয়করের খতিয়ান প্রকাশ করেননি।
ট্রাম্প নিজে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা অন্যান্যদের হিসেবনিকেশের সঙ্গে মেলে না। ২০১৫ সালের জুন মাসে ট্রাম্প বলেন যে, তার সম্পদের মূল্য আটশ’ কোটি ডলারের বেশি। কিন্তু ফোর্বসের হিসেব অনুযায়ী তার সম্পদ ৪১০ কোটি ডলার। ২০১৫-র জুলাই মাসের মাঝামাঝি ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায় যে, তার বিত্তের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার। কিন্তু ব্লুমবার্গ সংবাদ সংস্থার মতে তখন ট্রাম্পের সম্পদ ২৯০ কোটি ডলারের বেশি নয়।
ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত জার্মান পত্রিকা ‘হান্ডেলসব্লাট’-এর বিবরণ অনুযায়ী, ২৫টি দেশের ৫০০ কোম্পানিতে ট্রাম্পের শেয়ার আছে। এই সব কোম্পানির কার্যকলাপ, আয়-ব্যয় বা মুনাফা সম্পর্কে প্রায় কিছু জানা নেই। ২৫টি দেশে ট্রাম্পের ১৪৪টি কোম্পানি আছে, বলে সিএনএন দাবি করে থাকে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী ট্রাম্পের অন্তত ১৮টি দেশে ১১১টি কোম্পানি আছে।
ট্রাম্পের সাম্রাজ্য হলো ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’, যা তিনি তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি এই কোম্পানিটির দায়িত্বে। সারা বিশ্বে এই কোম্পানির বড় বড় প্রপার্টি আছে, যেমন নিউ ইয়র্কে ৪০ নম্বর ওয়াল স্ট্রিট, ভ্যানকুভারে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ার বা লাস ভেগাসের ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল।
ট্রাম্পের সম্পদ মোটামুটি চারটি বহুতল ভবনে আবদ্ধ, বলে ফোর্বস পত্রিকার অভিমত। নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের দু’টি অফিস ভবন আছে, এছাড়া তিনি ফিফথ অ্যাভিনিউ-এর ট্রাম্প টাওয়ারের অংশীদার। সান ফ্রান্সিস্কোতেও তার একটি বহুতল ভবন আছে। এই চারটি বহুমূল্য স্থাবর সম্পত্তি ট্রাম্পের সম্পদের মোট ৪০ শতাংশ, বলে ফর্বস-এর ধারণা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প মোট ১৭টি গল্ফ কোর্সের মালিক। ২০১৬ সালের মে মাসে ট্রাম্প বলেন যে, এই গল্ফ কোর্সগুলি থেকে তার বছরে ৩০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়।
অ্যাটলান্টিক সিটিতে ‘ট্রাম্প তাজমহল’ নামে একটি ক্যাসিনো আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ট্রাম্প অ্যাটলান্টিক সিটি ও ফ্লরিডায় তার ক্যাসিনোগুলোতে অনেক টাকা ঢেলেছেন। অ্যাটলান্টিক সিটির তাজ মহল ক্যাসিনোটি তৈরি করতে নাকি ট্রাম্পকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে। ক্যাসিনোটি প্রথমবার দেউলিয়া হয় ১৯৯১ সালে; তারপর ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আরও তিনবার দেউলিয়া হয়। অবশেষে ২০১৬ সালের ১০ই অক্টোবর ক্যাসিনোটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
‘টেলিভিশন মনোরঞ্জনের জগতেও ভাগ্যানুসন্ধান করেছেন ট্রাম্প। ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ নামের সফল টিভি সিরিজটির সঞ্চালক ও প্রযোজক ছিলেন ট্রাম্প। শো’টি চলে ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল অবধি। ১৭টি দেশে তা সম্প্রচার করা হয়েছে।
আদালতে মামলা আর ব্যর্থ চুক্তির কারণে অধিকাংশ মার্কিন ব্যাংক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টাকা ধার দিতে চায় না। তবে জার্মানির ডয়চে ব্যাংক কোনোদিনই ট্রাম্পকে না বলেনি, বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ পত্রিকার খবর অনুযায়ী ডয়চে ব্যাংক ১৯৯৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পকে ২৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। সিএনএন-এর খবর অনুযায়ী ডয়চে ব্যাংকের কাছে ট্রাম্পের এখনও ৩৬ কোটি ডলার ধার আছে।
অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা তাদের ব্যবসা কোনও ট্রাস্ট বা নিধির হাতে তুলে দিয়েছেন। মালিকানা বজায় থাকলেও, ব্যবসা চালানোয় আর তাদের কোনও হাত থাকেনি। ট্রাম্পও নিজের ব্যবসা তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন।