ক্রাইমবার্তা রিপোট: আশুলিয়ায় গার্মেন্ট শ্রমকিদের বেতন বৃদ্ধির দাবিকে অত্যন্ত যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে সরকারকে আালোচনার মাধ্যমে সেই দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। সেইসাথে শ্রমিক ছাটাই বন্ধ এবং আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, হয়রারি ও নির্যাতন বন্ধ এবং আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, বিনা ভোটের অবৈধ সরকার তাদের নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে শুধু মুষ্টিমেয় কিছু লোকের বেতন বৃদ্ধি করায় গোটা সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বাসা বাড়ির ভাড়া বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি, আধা সরকারি, গার্মেন্টস শ্রমিক, শ্রমজীবিসহ সাধারণ মানুষের বর্তমানে ত্রাহি অবস্থা। এক অনতিক্রান্ত শৃঙ্খলের বেড়াজালে গোটা রাষ্ট্রকে আটকে রাখা হয়েছে। মুক্তির করুণ কাকুতি আজ চারিদিকে ঝংকৃত হয়ে ওঠেছে। তাই বর্তমানে জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় চেপে বসা স্বৈরাচারের ভয়াবহ ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দেশের মানুষকে আজ দৃঢ় পদে অগ্রসর হতে হবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের যৌক্তক দাবি মেনে না নিয়ে পেশী শক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান হবে না। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি পোশাক মালিক ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করে নিরপরাধ শ্রমিকদের কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করুন।
রিজভী বলেন, আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার, হয়রানি ও নির্যাতন চলছে। ইতোমধ্যে সাভার উপজেলার বিএনপি মনোনীত নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিনিসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন সাংবাদিককে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক এমপি ও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিনসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে আটককৃত নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করছি।
তিনি আরো বলেন, দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের হার ও বীভৎসতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নারী ও শিশু ধর্ষিতা হচ্ছেন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, এমনকি ধর্ষণ বা গণধর্ষণের পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হাতে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত এক বছরে প্রায় তিন শ’ নারী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এক বছরে নারী নির্যাতন বেড়েছে ৭৪%। বেড়েছে গণধর্ষণের ঘটনা।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনাসহ মোট পাঁচ হাজার নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার দেড় শতাধিক এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৫০ জনকে। এছাড়াও শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে অভিভাবদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। শিশু অপহরণের পর অনেক ক্ষেত্রেই মুক্তিপণ দাবি করা হয়। প্রায় সময়ই টাকা দিয়েও শিশু হত্যা ঠেকানো যাচ্ছে না। এমনতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতির ফলে খুন খারাপি বেড়ে গেছে। তারওপর নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গোটা নারী সমাজ আজ উদ্বিঘ্ন। ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার নারী শিশুদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মানুষের কোথাও কোন আজ নিরাপত্তা নেই। পুলিশ নির্ভর অবৈধ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে বিরোধী দল দলনের জন্য ব্যবহার করায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকার বেআইনি সরকার বলেই নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। কারণ এরাই সৃষ্টি করেছে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সে কারণে বীভৎস্য অপকর্মে রাষ্ট্র-সমাজে প্রচণ্ড আবর্ত সৃষ্টি করেছে দুস্কৃতিকারীরা।