বিনা ভোটে ২৫৬ জন বিজয়ী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:দেশে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বেলা ২টা পর্যন্ত। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে প্রতিটি বুথে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া এমপিদের নির্বাচনের এলাকা ত্যাগে বাধ্য করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে ইসি। প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় জামালপুরের এসপিকে প্রত্যাহার করেছে ইসি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ নির্বাচনে তিন পদে (চেয়ারম্যান, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৫৬ জন। এ নির্বাচনে একক প্রার্থীর সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। ইসির তথ্য মতে, চেয়ারম্যান পদে ২১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন নিয়ে মোট ২৫৬ প্রার্থী বিনাভোটে বিজয়ী ও নির্বাচিত হয়েছেন।

এ দিকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি। কিন্তু ভোটারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে এমন অভিযোগে সোমবার কমিশন বৈঠকে প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় অর্ধশত বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হচ্ছে।
এ দিকে জেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ইসি। নির্বাচন কমিশনার মো: শাহনেওয়াজ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপিদের আচরণবিধি মেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে যেসব সংসদ সদস্য এখনো নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন তাদেরকে সেখান থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সংসদ সদস্যরা যেন এলাকা ছাড়েন, তিনি (স্পিকার) এ বিষয়ে নির্দেশ দেবেন। আশা করি, সুষ্ঠুতার স্বার্থে তারা নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত করবেন। আমরা অভিযোগ পেয়েছি অনেক সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। এমনকি তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করছেন। আইন প্রণয়নকারী সংস্থা অর্থাৎ পার্লামেন্টের মেম্বার হয়ে তারা বেআইনি কাজ করবেন, এটা মেনে নেয়া যায় না।
তিনি জানান, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করি, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারব।
ইসি সচিব মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আশা করি, কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এ নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচনে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সজাগ দৃষ্টিতে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনের গোপনীয়তা রক্ষার্থে ভোটাররা মোবাইল ফোন, ঘড়ি অর্থাৎ স্ক্যান করা যায় এমন কোনো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোট কক্ষের গোপনীয়তা যাতে বজায় থাকে আমরা তার জন্য এ ব্যবস্থা নিয়েছি।
সচিব আরো বলেন, ৬১টি জেলায় কেন্দ্র ৯১৫টি। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এ ছাড়া র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন থাকবে। জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেয়ার কারণে ভেতরের নিরাপত্তাই বেশি জোরদার করা হচ্ছে।
স্পর্শকাতর ও হুমকি রয়েছে এমন ২০ জেলায় মোতায়েন করা হচ্ছে শতাধিক প্লাটুন বিজিবি সদস্য। প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন করে এ সংখ্যা তিন হাজারের ওপরে। মোতায়েন করা জেলাগুলোর মধ্যে বিজিবি প্রতিটি উপজেলায় দুই প্লাটুন ভ্রাম্যমাণ ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। সমুদ্র উপকূলীয় সন্দ্বীপ ও হাতিয়ায় মোতায়েন করা হচ্ছে দুই প্লাটুন কোস্টগার্ড। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় র্যাবের তিনটি টিম কাজ করবে। দুইটি স্ট্রাইকিং এবং একটি মোবাইল টিম। এ হিসাবে র্যাবের সদস্য সংখ্যা থাকবে পাঁচ হাজারের বেশি।
পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্যসহ প্রতিটি কেন্দ্রে ২০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার। অস্ত্রসহ এসআই, হেড কনস্টেবল ও ব্যাটালিয়ন আনসার এবং লাঠিসহ আনসার ও ভিডিপির (পুরুষ-মহিলা) সদস্য কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে।
সংসদসহ সব নির্বাচন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হলেও এ নির্বাচনে ব্যতিক্রম হয়েছে। ভোটার ও কেন্দ্র কম হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। জেলা পরিষদে সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউপি জনপ্রতিনিধিরা ভোট দেবেন।
প্রার্থী সংখ্যা : জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা তিন হাজার ৯৩৮ জন। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় এ সংখ্যা ছিল ৪২৭১ জন। প্রত্যাহার, মনোনয়নপত্রে ত্রুটি এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে কমেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২১ জন (ফলে ২১ জেলায় চেয়ারম্যানপদে ভোট লাগছে না), সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৯ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৩ জন। বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৪০ জেলায় ১৪৬ জন, কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। কুষ্টিয়ায় চেয়ারম্যান ও একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।
ভোটার ও ভোটকেন্দ্র : জেলা পরিষদের ৬১ জেলায় ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১৪ হাজার ৮০০ জন। তবে মহিলার চেয়ে এ স্তরে পুরুষ ভোটার বেশি। ৬৩ ১৪৩ জন ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ৯১৫টি। আর কক্ষ থাকছে ১ হাজার ৮৩০টি। জেলায় জেলায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে এক লাখ ৩৮ হাজার ১২৬টি ব্যালট মুদ্রণ করেছে কমিশন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের জন্য ৩৯ হাজার ৮৭টি, সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ৫১ হাজার ৪৩৯টি এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ৪৭ হাজার ৬০০টি।

Check Also

সাতক্ষীরা পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর আমীরের শপথ

মাসুদ রানা, সাতক্ষীরা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা শহর শাখার পৌর ৪ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।