ক্রাইমবার্তা রিপোট:উগ্রবাদীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।
তিনি বলেন, যারা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে তারা দ্রুত ফিরে আসুক। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। অন্যথায় জঙ্গিদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত উগ্রবাদ সংক্রান্ত এক বিশেষ সভায় তিনি একথা বলেন।
আইজিপি বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ জঙ্গিদের আস্তানা থাকতে পারে না।
তিনি উগ্রবাদ দমনে অব্যাহত সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য দেশের জনগণ এবং গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সভায় পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর আজিমপুর, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর, পুরাতন জেএমবি এবং রাজধানীর দক্ষিণখানে উগ্রবাদীদের আস্তানায় অপারেশনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
এতে বলা হয়, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে উগ্রবাদী আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ছয় ও এক বছর বয়সী দুটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তিনজন নারী উগ্রবাদীসহ উগ্রবাদী আবদুল করিমের পুত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করে। অভিযান শেষে উগ্রবাদী তানভীর কাদেরী ওরফে জামশেদ ওরফে আবদুল করিমের লাশ পাওয়া যায়। গ্রেফতার এড়াতে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়।
পুলিশ উগ্রবাদীদের আস্তানা থেকে গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী নজরুল ইসলাম ওরফে মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি, তামিম আহমেদ চৌধুরীর ঘনিষ্ট সহযোগী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, তামিম আহমেদ চৌধুরীর অপর ঘনিষ্ট সহযোগী বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেট এর স্ত্রী শায়লা আফরিন এবং তানভীর কাদেরীর স্ত্রী তাহরিম কাদের ওরফে রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুরের পাতারটেকে উগ্রবাদী আস্তানায় ‘অপারেশন স্পেট ৮’ অভিযান চালানো হয়। এসময় পুলিশ ও উগ্রবাদীদের মধ্যে ৪/৫ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ে জেএমবির ঢাকা বিভাগের অপারেশন কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ ওরফে প্রভা ওরফে সানোয়ারসহ সাত জেএমবি সদস্য নিহত হন।
পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি এবং জেলা পুলিশ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন পুরাতন জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। পুরাতন জেএমবি সদস্যরা উগ্রবাদী কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ এবং আশেপাশের এলাকায় ডাকাতিতে নিয়োজিত ছিল।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীল দক্ষিণখানের উগ্রবাদী আস্তানায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। পুলিশ দু’জন নারী উগ্রবাদীকে আটক করে এবং তিনজন শিশুকে উদ্ধার করে। অভিযানে দুই উগ্রবাদী নিহত হয়। এর মধ্যে একজন আত্মঘাতি নারী উগ্রবাদী বোমা বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে। আটককৃত নারী উগ্রবাদীদের মধ্যে রয়েছে মেজর (অব.) মুরাদ ওরফে জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুননাহার ইসলাম, তাদের সন্তান পলাতক উগ্রবাদী মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ওরফে তৃষা এবং তাদের পাঁচ বছরের সন্তান। গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের হাড়িনাল ও ঢাকার আশুলিয়ার উগ্রবাদী আস্তানায় র্যাবের অভিযানে তিনজন উগ্রবাদী নিহত হয় ও একজনকে আটক করা হয়। নিহত উগ্রবাদীদের মধ্যে একজন জেএমবির অন্যতম নেতা সারোয়ার জাহান ওরফে নয়ন।
এসব অভিযানে পুলিশ উগ্রবাদী আস্তানা থেকে পিস্তল, ম্যাগাজিন, বুলেট, ল্যাপটপ, বই, গ্যাস সিলিন্ডার, মোটরসাইকেল, সোনা, চাপাতি, রামদা, গ্রেনেড ইত্যাদি উদ্ধার করেছে।
সভায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সিটিটিসির ডিআইজি মনিরুল ইসলাম, সিটিটিসির অতিরিক্ত ডিআইজি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং সিটিটিসি ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।