ক্রাইমবার্তা রিপোট: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে সাতটা চল্লিশ মিনিটের দিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র রায় জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। লিটনের বুকের বাম দিকে দুটো এবং বাম হাতে একটি গুলি লেগেছিল বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার বাছোহাটি গ্রামে এমপির বাড়ির কেয়ারটেকার ইউসুফ আলী জানান, সন্ধ্যার পর মনজরুল ইসলাম লিটন বাড়ির খুলিতে গাছের নিচে চেয়ারে বসে কয়েকজন কিশোরের সাথে ফুটবল দেয়া বিষয়ে কথা বলছিলেন। এসময় আমি খুলি থেকে বাড়ির ভিতরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি লাল ও একটি কালো রংয়ের মোটরসাইকেলে করে ৫ জন লোক খুলিতে আসে। তারা এমপি স্যারকে বলেন, বাড়ির ভেতরে চলেন জরুরি কথা। এ সময় এমপি তাদেরকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে নিজের ঘরে যান। সেখানে তারা এমপির স্ত্রীকে বলে আমাদের জরুরি কথা আছে। আপনি বাইরে যান। এমপির স্ত্রী বাইরে গেলে তারা এমপিকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে ঘর থেকে বের হয় । এরপর তারা মোটরসাইকেলে করে বাড়ির পেছন দিয়ে পশ্চিম পার্শ্বের দিক দিয়ে চলে যায়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ও স্থানীয়রা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ফুটবল নিতে আসা জুয়েল নামের এক কিশোর জানান, আমরা বল নেয়ার জন্য এমপির সাথে কথা বলছিলাম। তখন ওই ৫ জন লোক এসে আমাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে এমপিকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে মর্গে নেয়া হচ্ছে এমপি লিটনের লাশ
এমপি লিটনের স্ত্রী খোরশেদ জাহান জানান, মাগরিবের নামাজের পরপর মোটর সাইকেলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
এদিকে এমটি লিটনকে গুলি এবং তার মৃত্যুর খবরে পুরো সুন্দরগঞ্জ জুড়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে অবরোধ গড়ে তুলেছেন, মিছিল করছেন। অবরোধের কারণে সুন্দরগঞ্জের সাথে গাইবান্ধা ও রংপুরের সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, এমপি খুন হওয়ার ঘটনায় জনগণ রাস্তায় অবরোধ গড়ে মিছিল করছেন। আমরা জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করছি।
র্যাব-১৩ রংপুরের সিও আতিকুর রহমান জানান, নিজ বাড়িতে এমপি দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। দুর্বৃত্তদের ধরতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
গত বছর ২ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করেন সারাদেশে আলোচনায় আসেন এমপি লিটন। সৌরভের পিতা সাজু মিয়ার করা মামলায় ওই বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে লিটনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন।