ক্রাইমবার্তা রিপোট:থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানী জুড়ে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজারের অধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। নির্বিঘ্নে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশান, বনানী, বারিধারায় রাতে নির্দিষ্ট সময়ের পর সকল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মোড়ে নিয়োজিত করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
বহিরাগতদের ঠেকাতে ও নিরাপদে উৎসব উদযাপনে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান রমনা জোনের ডেপুটি কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সজাগ অবস্থানে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না হয়, সেজন্য যারা বাইরে থেকে প্রবেশ করছেন তাদের প্রত্যেককে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না।
এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটনের পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে নগরীর নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলো সকল নাগরিককে মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।নির্দেশনাগুলো হল- রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় বা প্রকাশ্যে কোনও ধরণের উৎসব আয়োজন করা যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে কোনও ধরণের অনুষ্ঠান করা যাবে না। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের রাত ৮টার মধ্যে এলাকায় প্রবেশ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পরে বহিরাগত কোনও ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে নীলক্ষেত এবং শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। প্রবেশের সময় সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখাতে হবে।
গুলশান এলাকায় প্রবেশের জন্য কাকলী ও আমতলী ক্রসিং খোলা থাকবে। তবে নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে এ দু’টি ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যে সকল নাগরিক বসবাস করেন না, তাদেরকে এলাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
রাত ৮টার পর হাতিরঝিল এলাকায় কেউ অবস্থান করতে পারবেন না। কোথাও আতশবাজি বা পটকা ফুটানো যাবে না। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সন্ধ্যা ৬ টার পর কোনও বার খোলা রাখা যাবে না।
রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ বা প্রকাশ্যে সকল প্রকার লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ট্রাফিক ডাইভারশন ও নির্দেশনা
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রবেশের পথ বন্ধ থাকলেও কয়েকটি পথে প্রবেশ করা যাবে। গুলশান, বনানী ও বারিধারায় প্রবেশের সকল রাস্তা বন্ধ থাকবে। তবে এসব এলাকার নাগরিকদের প্রবেশের জন্য কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ (কাকলী ক্রসিং) ও আমতলী ক্রসিং (মহাখালী) খোলা রাখা হবে।নির্দেশনা অনুযায়ী, রাত ৮টার পর থেকে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী ১১ নং রোড ক্রসিং, চেয়ারম্যান বাড়ি ক্রসিং, আমতলী ক্রসিং, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, গ্রুপ-ফোর, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং হয়ে এলাকায় প্রবেশ করা যাবে না। তবে এসব এলাকা থেকে বের হওয়ার জন্য রাস্তাগুলো ব্যবহার করা যাবে।
একইভাবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যান চলাচলের জন্য কেবলমাত্র পুরানো হাইকোর্ট-দোয়েল চত্বর-শহীদ মিনার- জগন্নাথ হলের দক্ষিণ গেট-পলাশীমোড় রাস্তাটি ব্যবহার করা যাবে।
এদিকে নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ফাঁকা রাস্তায় কার রেসিংসহ যে কোনও সমস্যা এড়াতে সকল প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাত ৮টার পর থেকে বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে থেকেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবু ইউসুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থার কোনও সমস্যা নেই। হাতিরঝিল বন্ধ হলেও যান চলাচলে তেমন কোন বিঘ্ন ঘটছে না। বিকল্প রাস্তাগুলো খোলা রয়েছে। এছাড়া শনিবার হওয়ায় রাস্তায় গাড়ির চাপও কম।
গুলশান জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) নুসরাত জাহান মুক্তা বলেন, প্রবেশ মুখগুলো ব্যাপক তল্লাশী করে গাড়ি প্রবেশ করানো হচ্ছে। একারণে কিছুটা জ্যাম তৈরি হলেও কিছুক্ষণ পর তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
থার্টি ফার্স্টকে ঘিরে কোনও ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে ঢাকা নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে। সারা শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্যদিয়ে এক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে, যাতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’
যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চেকপোস্ট ও ব্লকরেইড চলমান রয়েছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাস্তার ওপরে বা প্রকাশ্যে কোনও ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন না করার অনুরোধ জানান তিনি।