ক্রাইমবার্তা রিপোট:বরিশালে বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশে তিন দফা হামলা চালিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। এতে মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি এবায়দুল হক চান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন, বিএনপি নেত্রী ফারজানা রোজীসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধে ১০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে।
৫ জানুয়ারি দল ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরই এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ১০টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর প্রথম হামলা চালানো হয়। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশ ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দূরে সরিয়ে দেয়।
ঘটনার কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতাকর্মীরা ফের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু করলে সকাল পৌনে ১১টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের একদল উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী পুলিশের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়। এ সময় তারা বিএনপি দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করে। পরে আবারও হামলা চালানো হয়। তিন দফা হামলায় বিএনপি’র অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয় বলে অভিযোগ করেছেন আহত বরিশাল মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়া।
বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের আহত করাসহ দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করেছে। এই হামলার মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীনরা আবারো তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এতে তারা বিস্মিত হয়েছেন।
জেলা বিএনপি (দক্ষিণ) সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে হামলার ঘটনায় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুই দফা হামলার পর বিএনপি তাদের দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেখানে বেশ কিছুক্ষন অবরুদ্ধ থাকার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের প্রহরায় মহানগর বিএনপি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট সরোয়ারের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় ত্যাগ করে। সদর রোডের হোটেল আলী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল পর্যন্ত হেটে যাওয়ার পর সরোয়ার গাড়িতে উঠে বাসায় চলে যান। তিনি গাড়িতে ওঠার পরপরই আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী তৃতীয় দফায় হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর। এই হামলায় মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়া ও জেলা সভাপতি এবায়দুল হক চানসহ কয়েকজন আহত হয়।
জিয়া অভিযোগ করেন, তাদের ওপর প্রত্যেকবারের হামলা পরিকল্পিত। পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যুবলীগের একদল নেতাকর্মী বিএনপি অফিসের মাইক খুলে নেয়।
এদিকে বিএনপি’র সমাবেশে ৩ দফা হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু বলেন, বরিশালে বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এই কোন্দলের কারণে তারা নিজেরা সংঘাতে জড়িয়ে আওয়ামী লীগের উপর দায় চাপাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সমাবেশ তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি অফিসের পাশে আওয়ামী লীগ কর্মীদের অবস্থান নেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবু বলেন, অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মহানগর শ্রমিক লীগ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। সেখানে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়।
অপরদিকে পুলিশের সামনে তিন দফা হামলার বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিন) গোলাম রউফ খান বলেন, দুটি রাজনৈতিক দল পাশাপাশি দূরত্বে অবস্থান নিয়েছিল। বিএনপি আওয়ামী লীগের জমায়েতের উপর বোতল ছুড়ে মেরে নেতাকর্মীদের উত্তেজিত করেছে। পরে তারা বিএনপি’র উপর হামলা করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।