ক্রাইমবার্তা রিপোট:শুধু নির্বাচন কমিশন গঠনে একজন ভালো মানুষকে নিয়োগ দিলেই হবে না। একটি নির্বাচনকালীন সরকারও চেয়েছে সিপিবি। এ ব্যপারে রাষ্ট্রপতিকে বেশি জোর দিয়েছেন দলটির প্রতিনিধিরা। নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থা আমূল সংস্কারে রাষ্ট্রপতি কাছে প্রস্তাব দিয়েছে সিপিবি নেতৃবৃন্দ।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গভবনে যান তারা।
পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে সিপিবির নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, মোহাম্মদ শাহ আলম, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাজ্জাদ জহির চন্দন, মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স ও আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।
প্রতিনিধিদলের পক্ষ ধেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে তিনটি বিষয়ের ওপর প্রস্তাব রাখেন।
এগুলো হলো- নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া, নির্বাচনকালীন সরকার ও আমূল পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সুপারিশ দেয়া হয়েছে প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে।
রাষ্ট্রপতিকে তারা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার ওপর নির্ভরশীল না করে গোটা প্রক্রিয়াটিকে একটি আইনগত কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এজন্য ‘সিলেক্ট কমিটি’ গঠনের পদ্ধতি নির্ধারণসহ সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ১নং ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা উচিত। প্রধান বিচারপতি অথবা অ্যাটর্নি জেনারেল, স্পিকার, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান, মহা হিসাব-নিরীক্ষকসহ সাংবিধানিক সংস্থার প্রধানগণ এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দু’জন বিশিষ্ট দল নিরপেক্ষ নাগরিকের সমন্বয়ে এই ‘সিলেক্ট কমিটি’ গঠনের বিধান করা যেতে পারে। সিলেক্ট কমিটি কর্তৃক কমিশনে নিয়োগযোগ্য ব্যক্তিদের একটি প্রাথমিক তালিকা সুপারিশ করার বিধান থাকতে হবে। আর এ বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে সাতটি সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার
নির্বাচনকালীন সরকারের কর্তৃত্বকে সাংবিধানিকভাবে সংকুচিত করে তার কাজ তত্বাবধায়কমূলক ও অত্যাবশ্যক রুটিন কিছু কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এ উদ্দেশে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।
নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো
অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যক শর্ত হলো একটি স্বাধীন, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, পেশাদার দক্ষ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। এটি ‘প্রয়োজন’ হলেও ‘যথেষ্ট’ নয়। দেশে প্রচলিত ’নির্বাচনী ব্যবস্থা’র আমূল পরিবর্তন ছাড়া একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজানোর জন্য প্রয়োজন ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। নির্বাচনকে অর্থ, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি, সাম্প্রদায়িক প্রচারণা মুক্ত করা। যতোদিন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন হচ্ছেনা ততোদিন প্রচলিত ব্যবস্থায় সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি ভোটে নির্বাচন চালু করা। নির্বাচিত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে এলাকার জনগণ প্রয়োজনে যাতে ওই প্রতিনিধি প্রত্যাহার করতে পারে তার বিধান প্রবর্তন করা। প্রার্থী বা দলের মধ্যে কেউই সমর্থনযোগ্য নয় বলে কারো কাছে বিবেচিত হলে সেক্ষেত্রে ‘না’ ভোট প্রদানের বিধান ও ব্যবস্থা রাখা। এ বিষয়েও ১৫টি ধারায় ৪৪টি সুপারিশ করা হয়েছে।