ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: অদক্ষ হাতে পাঠ্য বই ছাপানোর কাজ হওয়ার পর এর মাশুল কে দেবে তা বলা মুস্কিল। সরকার বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তাদের আনন্দ অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে ভুল বানানের অসংখ্য পাতা ভরা পাঠ্যবিষয়গুলো। ইংরেজি বানানের ভুল থাকায় শব্দের অর্থ যেমন পাল্টে যাচ্ছে এবং বাংলা বানান রীতি আধুনিক হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সঠিক বানান কি হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকরাও এসব ভুলে ভরা পাঠ্য বই যতটা সম্ভব সংশোধন করে দিতে গলদঘর্ম হয়ে উঠছেন। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের এধরনের সংশোধন করে দেওয়ার মত কেউ নেই, সেসব শিক্ষার্থী পড়েছে বিপাকে। কচিমনে এসব শিক্ষার্থী ভুল বানান ও অর্থ শিখছে তাদের পাঠ্যবই থেকে। এত বিপুল পরিমাণ বই ফেরত নিয়ে সংশোধিত বই ফের শিক্ষার্থীদের হাতে সরবরাহ করা যথেষ্ট সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই যতœ সহকারে ও দক্ষহাতে পাঠ্যবইগুলো প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এধরনের মহৎ আয়োজন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তৈরি হত না।
শেষ পর্যন্ত ন্যাশনাল কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে কেন এধরনের ভুলে ভরা বই ছাপা হয়েছে। ভারতে বই ছাপানোর বিষয়টি সহজলভ্য ও সময়মত পাওয়ার দিকটি বিবেচনা করেই করা হয়েছিল। এখন এসব ভুল কিভাবে সংশোধন করা হবে সে ব্যাপারে ৩ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ বই ৪ কোটি ২৬ লাখ শিক্ষার্থীদের হাতে দেশের আনাচে কানাচে চলে গেছে। শুধু যে বানান ভুল তাই নয়, প্যারাগ্যারাপগুলো ঠিক মত সন্নিবেশিত হয়নি, বিভিন্ন ধরনের ত্রুটিপূর্ণ ব্যতিক্রম, প্রবন্ধ ভ্রান্তি সহ নানা ধরনের ভুল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের দিশেহারা করে তুলেছে। এসব বিষয় নিয়ে মিডিয়ার পাতা সরগরম হয়ে ওঠায় সরকারের পুরো আয়োজনটাই হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভাবমূর্তী বিনষ্ট হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, পাঠ্যবইতে ভুল সংশোধন করা হবে। ভুলে কিছু নমুনা দিতে গেলে বলতে হয়, ক্লাস ওয়ানের বাংলা টেক্সট বইয়ে ‘ওড়না’ চাওয়া সম্বলিত একটি বাক্য রাখা হয়েছে। কোমলমতি ছেলে অথবা মেয়ে ওড়না চাইবে কেন এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ৫ কিংবা ৬ বছরের একইট ছেলের ওড়না চাওয়া সম্পর্কে একটি বাক্য কতটুকু প্রাসঙ্গিক সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওড়না সম্পর্কে জানতে চাইলে ছোট শিক্ষার্থীদের শিক্ষক কি বলবেন, কিভাবে বুঝাবেন সে নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
আরেকটি ভুল হচ্ছে, কাউকে আঘাত দিও না এ ধরনের ইংরেজি বাক্যে আঘাতের বানান ভুল হয়ে যা লেখা হয়েছে তার অর্থ আঘাত না হয়ে মন হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা শিখছে কাউকে মন দিও না। এছাড়া কুসুমকুমারি দাস’এর সেই বিখ্যাত কবিতা, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’ লাইনটি ওলটপালট হয়ে মুদ্রিত হয়েছে। একই বইয়ে হুমায়ুন আজাদের লিখিত বই নামে একটি কবিতা ইতিমধ্যে ভুলের কারণে বাতিল করা হয়েছে। হেফাজত-ই ইসলাম কিছু কবিতার সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
২০০৯ সালে ১৫ সদস্যের জাতীয় পাঠ্যবই বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ছিলেন অধ্যাপক আকতারুজ্জামান। তিনি বলেন, দ্রুততার সঙ্গে পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ করতে গিয়ে যথাযথভাবে তা সম্পাদনা না হওয়ায় এধরনের ভুল রয়েগেছে। এমনকি সম্পাদনার কাজটিও পেশাগত অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন লোকদের দিয়ে করানো হয়নি। একই ধরনের অভিমত দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী । তিনি বলেন, লেখক ও সম্পাদকদের শুধু সময় কম নয়, সঠিক পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু যাদের জন্যে লিখিত তা যথাযথ হচ্ছে কি না সেদিকেও নজর রাখা জরুরি। প্রতিবছর বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এর মান নিশ্চিত বা বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
একই সঙ্গে বোর্ডকে দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগকে বইয়ের মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন রাশেদা। এতে বোর্ডের অন্য অংশ বই মুদ্রণের বিষয় দেখভাল করতে পারবে নির্বিঘেœ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এনসিটিবি’তে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পরগাছারা কোনঠাসা করে রেখেছ্।ে অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মত বোর্ডেও দক্ষ ব্যক্তিরা কাজ করতে পারছেন না। প্রভাবশালীরা তাদের উদ্দেশ্যসাধন করতে সমর্থ হয়েছে এবং তারই ছাপ আমরা দেখতে পাচ্ছি পাঠ্যবইতে। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অবলম্বনে অনুবাদ