ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট:২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ মারাত্মক আহত অবস্থায় মারা যায়। এর আগের দিন তাকে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করা হয়েছিল। তার মৃত্যুর ৫ বছর পর অন্তত ৪ হত্যাকারী এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জামিন দিতে অস্বীকার করায় এদের ৩ জন গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত থেকে পালিয়ে যান। আরেকজন পলাতক থাকায় তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি।
এ হত্যা মামলায় প্রথমবারের মত আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার কারণে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রদান করেছে। হত্যাকারীরা মুক্ত জীবন যাপন করছে নির্ভাবনায়। ফেসবুকে নিজেদের ছবি ও স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। এদের একজন ফেসবুকে পো্েস্ট লিখেছে, ‘আমি এখন মুক্ত পাখিৃ. এখন আমি উড়তে পারিৃ.’
কিভাবে একজন হত্যাকারী এমন দু:সাহস পায় ? এর আগে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে তাদের তিনজনের ছবি ছাপা হয়েছিল। তারা তখন মালয়েশিয়ায় ছিলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হত্যার পর আদালত থেকে কিভাবে তারা পালিয়ে যেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন হুংকার ছাড়ছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে তারা মালয়েশিয়ায় যেতে সক্ষম হলেন।
এবং কিভাবে তারা এতটা নির্ভয়ে থাকছে, হত্যাকা- ঘটিয়ে আস্থার সঙ্গে তারা তাদের মুখ দেখাতে পারছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ছবি ও স্ট্যাটাস আসছে আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের কি আতঙ্কে পালিয়ে থাকার কথা ছিল না। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ছবি ও স্ট্যাটাস দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে তারা কতটা নির্ভাবনায় রয়েছেন।
এরই মধ্যে তাদের কিছু সহপাঠীদের মতে এরকম আরো অনেক হত্যাকারী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এধরনের ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে জুবায়ের আহমেদ হত্যাকা-ের পরিণতি আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
এটা বোধগম্য নয়, দ্রুত বিচার আদালতে এধরনের হত্যাকা-ের বিচারের পর দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা কিভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে। এদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হত্যাকারীদের অনেকে মুক্ত জীবন যাপন করছেন। জীবনকে ভোগ করছেন। বিশ্বের সামনে তাদের কৃতকর্মের জন্যে কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। এধরনের দু:সাহস দেখানো তখনি সম্ভব যখন যদি তাদের মত হত্যাকারীদের পেছনে ক্ষমতাধর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা থাকেন, তাদের মুক্ত জীবনের জন্যে জামিনদার হিসেবে কাজ করেন।
এটা কি সত্যিই সম্ভব যে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খুবই অযোগ্য ও বিচার ব্যবস্থা দ্বিধান্বিত যার ফলে হত্যাকারীদের মুক্ত জীবন যাপনে কোনো বাঁধা দেওয়া হচ্ছে না। এসব প্রশ্নের উত্তর জানা খুবই জরুরি। রাষ্ট্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হত্যাকারীদের কি কোনো জবাবদিহি করার কিছু নেই।
এজন্যেই বছরের পর বছর হত্যাকারীরা দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে, বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। এজন্যে মানুষ নিজেদের অনিরাপদ মনে করে। নিরাপত্তাহীন ভাবে। এবং কোনো কোনো সময় নিরাশ হয়ে পড়ে যখন দ্যাখে রাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থা তাদের পাওনা বিচার ও অধিকার রক্ষায় নিশ্চিত কোনো ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে না।
প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও জুবায়েরের হত্যাকারীরদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চোখে দ্যাখে না বা ধরতে পারে না এটা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? রাষ্ট্রযন্ত্রের এধরনের অকার্যকর পরিস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের সদুত্তর কি হতে পারে? নাগরিক হিসেবে কি আমরা এধরনের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অধিকার রাখি না?
ডেইলি স্টার অনলাইনে ইরেশ ওমর জামালের লেখা থেকে অনুবাদ