কি হচ্ছে ইসি গঠনে? আজ আ’লীগের সাথে বসবেন রাষ্ট্রপতি

নতুন ইসি গঠনে তোড়জোড়

১১ জানুয়ারি ২০১৭,বুধবার, ০৬:৩০

আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ। নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করছেন রাষ্ট্রপতি। ইতোমধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে। ইসি গঠনের আইন তৈরির কথাও বলেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। আজ ক্ষমতাসীন সরকারের দল আওয়ামী লীগের সাথে বসবেন রাষ্ট্রপতি। এটিই হতে পারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির ইসি গঠন নিয়ে শেষ সংলাপ। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে ইসি পুনর্গঠনের বিষয়টি নিয়ে। কাজী রকীব উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিশন ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কমিশন গঠনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় নতুন কমিশন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সব দল অংশ না নেয়ায় ওই নির্বাচন দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যে ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল কমিশন অনেক ক্ষেত্রে তাতে ব্যর্থ হয়। পরে যে কয়টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে তাতেও কমিশন সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেনি। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়াই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আলোচনা ছাড়া গঠিত কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না এমনটি মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলো।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে বিদ্যমান নির্দেশনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের উদ্যোগ নিলেও পরে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কারণ সংবিধানে এ বিষয়ে আইন করার কথা বলা আছে। আইনের মাধ্যমে ইসি গঠিত হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে বিদ্যমান অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতাও কেটে যাবে। গত জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা বর্তমান নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে পুনর্গঠিত হয়েছিল। এ কমিশন গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনাও করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।
এ দিকে রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রস্তাব উপত্থাপন করেছে। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।
বিএনপি : রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এ জন্য এবার সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কিংবা দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী কোনো ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে পারবেন না। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে হবে। নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই কমিশন হতে হবে সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটি দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৎ, সাহসী, অবাধ ও সুষ্ঠু স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিকল্প নেই।
খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। এ জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যতিরেকে এসব সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং সুষ্ঠু অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
জাতীয় পার্টি : রাষ্ট্রপতির কাছে একটি ‘নিরপেক্ষ’ ও ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং বর্তমান সংসদেই এর জন্য আইন পাস চেয়েছে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। পাশাপাশি দলটি বর্তমান নির্বাচনপদ্ধতি পাল্টে ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে আসন নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনার পর সাংবাদিকদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী। চলমান রাজনীতি ও জাতীয় নির্বাচনে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে আস্থাহীনতা ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, চলমান সংলাপের মধ্য দিয়ে তা মুছে ফেলার পথ উন্মোচিত হবে। আমরা রাষ্ট্রপতির প্রতি আস্থা রাখি।
তারা আশা করেন, সবার সাথে আলোচনার পর রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারবেন। ফলে আগামী নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে বিশ্বাস করি।
এলডিপি : শক্তিশালী নতুন নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার চেয়েছে এলডিপি। একই সাথে দলটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাবের সাথে একমত পোষণ করে নির্বাচনী বিধিবিধানের সংস্কার ও সংশোধনেরও প্রস্তাব করেছে।
সংগঠনটির সভাপতি অলি আহমদ বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও আনুষঙ্গিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমর্থন-সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এসব সহযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সে জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার প্রয়োজন।
জেএসডি : পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষ গঠন করে নির্বাচনের সময়ে সেখান থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটির প্রস্তাব হলোÑ পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষ গঠন করে নির্বাচনের সময় সেখান থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা।
উচ্চকক্ষসহ পার্লামেন্ট হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। নির্বাচনের আগে এ উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর সেই সরকারের পরামর্শ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান করতে হবে। একইভাবে ইসির গঠনকাঠামো ও ক্ষমতাও নির্ধারিত হবে।
গণফোরাম : নির্বাচনকালীন সরকার ও প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে হবে বলে মনে করেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ইসি পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপ শেষে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আইনে কী কী বিধান করা প্রয়োজন সে বিষয়ে আমরা বলেছি। সার্চ কমিটি গঠনে আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। তবে ক্যাটাগরি বলেছি।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ : দশম জাতীয় সংসদকে জনপ্রতিনিধিহীন আখ্যায়িত করে এই সংসদে ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন নয়, সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতা বলে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন করতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদকে আহ্বান জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপ শেষে তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৮তম অনুচ্ছেদে যে কথা বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি স্বাধীন মুক্তভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা বলেছিÑ মাছ যেমন পানিতে থাকে। ঠিক তেমনি নির্বাচন কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক। বর্তমান নির্বাচন কমিশন কখনো রাজনৈতিক দলের সাথে কোনো কথা বলেনি, কখনো আলোচনা করেনি।

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।