রামপাল প্রকল্পের পরিচালক বিপুল বণিক স্বীকার করেছেন, ভয়ভীতি ও হুমকির মুখে দুটি ছাড়া অন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিতে পারেনি। তারা ভয়ে টেন্ডার জমা না দিয়েই চলে গেছে। তিনি জানান, ১৫টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দিতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের আশংকার কথা র্যাব ও পুলিশকে জানিয়েছি।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে গত ২৮ নভেম্বর ১০০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ১৭ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এতে সিডিউল কেনে। এগুলো হল- তমা কনস্ট্রাকশন, আবদুল মোনেম লিমিটেড, মীর আক্তার, কনকর্ড প্রগতি, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএম বিল্ডার্স, ম্যাক্স, ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন, র্যাবআরসি, মনিকো লিমিটেড, সিপ্লেক্স, ফেল ইউডিসি, এসিএলআরপি, হুবেই, সিব্রনাস ও ম্যাক্স র্যাকিং। টেন্ডার কমিটির প্রাথমিক বাছাইয়ে সব প্রতিষ্ঠানকেই টেন্ডার জমা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু টেন্ডার জমা না দিতে মঙ্গলবারের আগে থেকেই নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়। টেন্ডারে অংশ নেয়া ফেল ইউডিসির প্রতিনিধি শামসুর রহমান সোমবার প্রকল্প পরিচালককে মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন, তারা যেন মঙ্গলবার এলজিইডি ভবনের আশপাশে না আসে সেজন্য তাকে শাসিয়ে দেয়া হয়েছে।
কনকর্ড প্রগতির কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমি মোটরসাইকেলে করে মঙ্গলবার টেন্ডার জমা দিতে যাই। দুপুর ১টার দিকে এলজিইডি ভবনের মূল গেটে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মোটরসাইকেলের চাবি ও ব্যাংক গ্যারান্টিসহ টেন্ডারের সব ডকুমেন্টস ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল সন্ত্রাসী। এরপর আমাকে এলজিইডি ভবনের দক্ষিণ পাশে একটা মাঠে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বসিয়ে রাখে। কতজন মিলে আপনার সিডিউল ছিনিয়ে নেয়- জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি গ্রুপ। তারা এলজিইডি ভবনের মূল গেটের আশপাশে অবস্থান নিয়ে আমার মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও চড়াও হয়। অনেককে ভয় দেখিয়ে গেট থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি আমি আমাদের কোম্পানির পরিচালক নিত্যঞ্জয়কে জানিয়েছি। তিনি বলেন, এলজিইডি ভবন থেকে ফোন করে আমাদের খবর নিয়েছে। আমরা আমাদের অভিযোগ তাদের জানিয়েছি।
মীর আক্তার লিমিটেডের পরিচালক শামা-ই জাহির যুগান্তরকে বলেন, আমরা টেন্ডার জমা দিতে পারিনি। সব কাগজপত্র তৈরি করে আমাদের প্রতিনিধি এলজিইডি ভবনে যায়। কিন্তু আমাদের টেন্ডার জমা দিতে দেয়া হয়নি। বাধা দিয়েছে বেশ কিছু যুবক। আমরা বিষয়টি এলজিইডিকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি জানান, টেন্ডারের জন্য আড়াই কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টিও ছিল। অজ্ঞাতনামা যুবকরা ভবনের ভেতর থেকে আমাদের প্রতিনিধিকে ফিরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, নিরাপত্তা না থাকায় আমাদের প্রতিনিধি ফেরত আসে। আমরা মনে করি, আমাদের প্রতিহত করা হয়েছে।
একই অভিযোগ জানান এমএম বিল্ডার্সের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, টেন্ডার ড্রপ করতে আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি মস্তানরা। টেন্ডারে অংশ নেয়া আরেক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, দুটি প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে তাদের টেন্ডার জমা দিল, বাকিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হল- কারা সন্ত্রাসীদের দিয়ে এসব করিয়েছে এটা ধারণা করে নিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তা উৎপল মঙ্গলবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে কোনো ধরনের বাধা দেয়া হয়নি। আমরা টেন্ডার ড্রপ করে চলে এসেছি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আবদুল মোনেম লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
টেন্ডার ছিনতাই বা টেন্ডারে বাধা দেয়ার কারণে ১৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিকে অংশ নিতে না দেয়ায় এখন এর ভবিষ্যৎ কী হবে বা পুনঃটেন্ডার হবে কিনা? জবাবে রামপাল প্রকল্পের পরিচালক বিপুল বণিক যুগান্তরকে বলেন, আমাদের একটা টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি আছে। আমি পুরো ঘটনা কমিটির সামনে উপস্থাপন করব। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরাও চাই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজটা দিতে। কিন্তু টেন্ডার জমা দেয়ার সময় এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে আমরা ভাবতে পারিনি।
টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, খুলনা-মংলা সড়কের বাবুর বাড়ি থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হবে।যুগান্তর।