ক্রাইমবার্তা রিপোট: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল হামিদ মিঞার নেতৃত্বাধীন একটি দল আজ বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকের পরে আরাস্তু খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে কারও চাকরি খাওয়ার ইচ্ছে নেই। সবাইকেই এ কথা বলেছি। তবে যদি কারও সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকে, সেটা মেনে নেওয়া হবে না। কারণ, আমরা চাই প্রফেশনালদের ব্যাংক।’ বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকা না–থাকার বিষয়ে তো কোনো নীতিমালা নেই—সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যে আরাস্তু খান বলেন, ‘হ্যাঁ, সবাই তো ভোট দেন। যে-কেউ যে-কাউকে ভোট দিতে পারেন। কেউ চাইলে বিএনপিকেও ভোট দিতে পারেন। ব্যাংকে সঠিকভাবে কাজ করলে কারও কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ। কারও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’ রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত আছেন—এমন কাউকে কি চিহ্নিত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এমন চিহ্নিত করা আমি পছন্দ করি না। ব্যাংক চলবে প্রফেশনাল পদ্ধতিতে।’ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ব্যাংকটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তন আনা হয় ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদেও। নতুন পরিচালক হিসেবে পর্ষদ সভায় যোগ দিয়েই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খান। চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও ব্যাংকটির পরিচালক ও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে জোর পূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন মুস্তাফা আনোয়ার। পদত্যাগ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানও।
ইসলামী ব্যাংক কর্মীদের বেতন কম, বাড়ানো হবে: আরাস্তু খান
ইসলামী ব্যাংকের নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান আজ বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন আরাস্তু খান। সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের ৩১৮ শাখার ব্যবস্থাপকসহ শীর্ষ পর্যায়ের ৫ শতাধিক কর্মকর্তা অংশ নেন।
সম্মেলনে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হামিদ মিঞার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব-উল-আলম। সম্মেলনে সব পরিচালকের মুখেই ছিল ব্যাংকটির নেতৃত্ব পরিবর্তনে কথা। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগেই ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছে—এ-ও বলেছেন অনেকে।
ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ‘অন্য ধর্মের কেউ শরিয়া মেনে ব্যাংকিং করতে চাইলে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে নিয়োগ, পদোন্নতি—সবই মেধার ভিত্তিতে হবে। কারও চাকরি যাবে না। ব্যাংকের কেউ কোনো দলের রাজনীতি করবেন না। এ ব্যাংকের কর্মীদের বেতন অন্যদের চেয়ে কম, এ জন্য সবার বেতন বাড়ানো হবে। পরিবর্তনে গভর্নর খুশি, অর্থমন্ত্রী ভালোভাবে নিয়েছেন (ভেরি পজিটিভ)।’
অনুষ্ঠানে শুরুতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বতন্ত্র পরিচালক ও ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, ‘পুরোনো গ্রাহকদের মধ্যে কারা ঋণ পাচ্ছেন, কার ঋণ পুনঃ তফসিল হচ্ছে—সব পুঙ্খানুপুঙ্খ জানা আছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের ৮৫ কোটি টাকার সুবিধাভোগী কারা, তা-ও জানা আছে। সারা দেশ থেকে টাকা তুলে খাতুনগঞ্জ, মতিঝিল, বনানীতে ঋণ দিলে চলবে না। সারা দেশে ঋণ ছড়িয়ে দিতে হবে। এ বছর আড়াই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করতে হবে।
সৈয়দ আহসানুল আলম আরও বলেন, ‘যারা ব্যাংক ধ্বংসের কথা বলছে, তারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে। আমরা ধর্মীয় রাজনীতি চাই না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ধর্মকে ব্যবহার সমর্থন করি না। দলীয় পরিচয় যার যা হোক, ব্যাংকে সবার চাকরি থাকবে। তবে অন্যায় করলে অন্য ব্যাংকের মতো এ ব্যাংকও ছেড়ে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল আলম উপস্থিত কর্মীদের লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও পরিচালক আবদুল মতিনকে জেনারেল হিসেবে সম্বোধন করেন। সম্মেলন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০১৬ পর্যন্ত আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৩৩ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালের তুলনায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে সুদবিহীন আমানত ৬ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ব্যাংকটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তন আনা হয় ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদেও। নতুন পরিচালক হিসেবে পর্ষদ সভায় যোগ দিয়েই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খান। চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও ব্যাংকটির পরিচালক ও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুস্তাফা আনোয়ার। পদত্যাগ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল মান্নানও