সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল অনৈতিকভাবে দেশ শাসন করছে আওয়ামী লীগ –

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: বিনা ভোটে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ তিন বছর ‘অনৈতিকভাবে’ দেশ শাসন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় দশম সংসদ নির্বাচনের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে পরবর্তী নির্বাচন দেওয়ার ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ’ করেছে আওয়ামী লীগ। অবশ্য বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কোনো কোনো দেশের অকুণ্ঠ সমর্থন ‘অনৈতিক’ এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে সরকার নিয়ে আসাই বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। একইসঙ্গে তিনি বলেন, সব নিবন্ধিত দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ইসি (নির্বাচন কমিশন) গঠনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগে তারা আশাবাদী।


দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সরকারের নানা সমালোচনার পাশাপাশি নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। সোমবার উত্তরার বাসভবনে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :

সমকাল :বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ সরকারের তিন বছরের শাসনকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

মির্জা ফখরুল :শুধু বিএনপি নয়, অনেকেই ওই একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ অনৈতিকভাবে তিন বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। সরকারের সফলতা বলতে কিছু দেখছি না। সংক্ষেপে বলতে হলে গণতন্ত্রকে নির্বাসন, বিরোধী দল দমন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, প্রশাসনে দলীয়করণ, রাবার স্ট্যাম্প সংসদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বৃদ্ধি, তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিদের দ্বারা অপহরণ ও গুম, শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মহোৎসবের এই তিন বছরকে কুশাসন বলা চলে।

সমকাল :পদ্মা সেতু ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ কি সরকারের সাফল্য নয়?

মির্জা ফখরুল :পদ্মা সেতুর সাফল্য সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। কারিগরি দিক এবং এর স্থায়িত্ব সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হচ্ছে না। যে প্রকল্পের ব্যয় প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছিল ৮ হাজার কোটি টাকা; সেটা বেড়ে প্রায় ২৯ হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো একটি প্রমত্ত নদীশাসনের কাজ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত একটি পিলারও বসেনি। আর দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উদ্যোগ বিএনপির আমলেই প্রথম নেওয়া হয়েছিল।

সমকাল :আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছে, জঙ্গিবাদ উত্থানের নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াত জড়িত রয়েছে। আপনার জবাব কি?

মির্জা ফখরুল :জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল আওয়ামী লীগের আমলেই। বিএনপি জঙ্গিদের দমন করেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের অনেকে তাদের নেতৃত্ব দিয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালেই রাখা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের অভিযোগে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তদন্ত ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে।

সমকাল :রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী ইসি গঠনের ব্যাপারে আপনারা কি আশাবাদী?

মির্জা ফখরুল :রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে আমরা আশাবাদী। নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সে কারণেই আমরা মনে করি, সকল দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা উচিত।

সমকাল :বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন ‘নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারে’র রূপরেখা দেওয়ার ঘোষণায় কী এমন ইঙ্গিত করে যে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছেন?

মির্জা ফখরুল :নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষ থাকতে পারে তার জন্য আমরা ‘সহায়ক সরকারে’র কথা বলেছি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সমকাল :আগামী সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে আপনাদের দাবির সপক্ষে প্রভাবশালী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা অন্য কোনো দেশের সমর্থন পাচ্ছেন কি?

মির্জা ফখরুল :দশম সংসদ নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক বিশ্ব তা গ্রহণ করেনি। তারা বরাবর সকল দলের অংশগ্রহণে একটি ‘ইনক্লোসিভ’ নির্বাচনের কথা বলেছে।

সমকাল :আওয়ামী লীগকে দ্রুত নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন বলেও অনেকে মনে করেন…?

মির্জা ফখরুল :এটা ঠিক নয়। বিনা ভোটে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকার নজিরবিহীন দমননীতি, হত্যা, খুন, গুম ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।

সমকাল :দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অচিরেই বিচারাধীন দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারারুদ্ধ হলে সরকার আগাম নির্বাচন দিতে পারে বলে আভাস দিচ্ছেন অনেকে…?

মির্জা ফখরুল :মিথ্যা মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া সমীচীন হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া এই মামলাগুলো সবই সাজানো।

সমকাল :ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে বিপর্যস্ত বিএনপি ‘ফিনিক্স পাখি’র মতো আবার ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণার প্রতিফলন তো বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না?

মির্জা ফখরুল :অনৈতিক ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে বিএনপির মতো উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পক্ষে স্বাভাবিক রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। নানা নির্যাতন ও বাধাবিঘ্নের মধ্যেই বিএনপির পুনর্জাগরণের কাজ চলছে।

সমকাল :সদ্য অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়া কি সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এবং আপনাদের দুর্বলতা প্রমাণ করে না?

মির্জা ফখরুল :এটি একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এতে জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পড়েনি।

সমকাল :বিএনপির গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ের ‘কতিপয় সিন্ডিকেটের’ আশীর্বাদপুষ্ট অযোগ্য নেতাদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া এবং সিনিয়র ও যোগ্যদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে কী বলবেন?

মির্জা ফখরুল :এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিএনপির মতো বড় দলে ছোটখাটো সমস্যা থাকতেই পারে। তাতে সংগঠনে কোনো প্রভাব পড়ে না। তাছাড়া সিনিয়র ও যোগ্য নেতারা কেউ দলের বাইরে নন।

সমকাল :দলের অনেক সিনিয়র নেতাকে চেয়ারপারসন বিশ্বাস করেন না এবং বর্তমানে তারা অনেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বা তাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয় না বলে গুঞ্জন রয়েছে?

মির্জা ফখরুল :এটা ঠিক না।

সমকাল :বিএনপির বর্তমান নাজুক অবস্থার পেছনে আপনাদের কোনো ভুল আছে বলে মনে করেন কি? আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বা কি?

মির্জা ফখরুল :দেশ ও রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী, অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা করব।

সমকাল :বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি?

মির্জা ফখরুল :গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সমকাল :সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মির্জা ফখরুল :সমকালকেও ধন্যবাদ। –

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।