জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর- আশাবাদ আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে#ইসির ওপর আস্থা রাখুন * সফলতা বিচারের ভার আপনাদের * মেয়াদ শেষেই নির্বাচন

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ
আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে
ইসির ওপর আস্থা রাখুন * সফলতা বিচারের ভার আপনাদের * মেয়াদ শেষেই নির্বাচন
সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রেখে সব রাজনৈতিক দল সে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যারা এদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, বাংলার মাটিতে তাদের ঠাঁই হবে না। বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ভাষণের শুরুতেই দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। ৩৬ মিনিটের এ ভাষণে তিনি বলেন, আমরা চলতি মেয়াদের তিন বছর অতিক্রম করলাম। এই মেয়াদ শেষে হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করি সব রাজনৈতিক দল তার উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখবেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন। দেশে একটি গোষ্ঠী ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার অপচেষ্টা করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্মের নামে যারা মানুষ হত্যা করে তারা ইসলামের বন্ধু নয়, শত্রু। ইসলাম কখনও মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ তবে ধর্মান্ধ নয়।

হাজার বছর ধরে এ দেশের মাটিতে সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করে আসছেন। যারা এই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, বাংলার মাটিতে তাদের ঠাঁই হবে না। তিনি দেশের সব ইমাম, মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, স্থানীয় মুরব্বি, আনসার-ভিডিপি সদস্য এবং অভিভাবককে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষ করে অভিভাবকদের সন্তানের প্রতি নজর রাখতে বলেন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ হয়েছে। আমরা সব সময়ই সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সংবিধানের আওতায় আমরা সব ধরনের ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। এমনকি বিএনপি যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক, তাও আমরা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দলটির নেতৃত্ব সে আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পেট্রলবোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা করে মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছিল। তারা শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধবংস করে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত ছিল। সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু এ নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন ৯২ দিন পার্টি কার্যালয়ে আরাম-আয়েশে অবস্থান করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্দোলনের নামে আবার জ্বালাও-পোড়াও-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উসকে দেন। এই তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে ২৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেল গাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়। কিন্তু দেশবাসী তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণ আর এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ও দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য আমরা চেষ্টার ত্রুটি করিনি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে, উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল, এক আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি। অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, দেশের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। বেড়েছে রিজার্ভ। দেশে-বিদেশে মানুষের কর্মসংস্থান, মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ক্রীড়া, সমুদ্রসীমাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের কথা ছাড়াও বিভিন্ন খাতে নেয়া সরকারের উন্নয়ন পদক্ষেপ ও প্রকল্পগুলোর কথা উল্লেখ করেন। যোগাযোগ খাতে নেয়া বড় বড় প্রকল্প এবং দৃশ্যমান উন্নয়নের পাশাপাশি নির্মীয়মাণ পায়রা বন্দরের কথাও বলেন তিনি। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি- সে বিচারের ভার আপনাদের ওপরই রইল।’ দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এ কমিশনকে শক্তিশালী করেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করেছে। জাতীয় সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নিয়মিত সংসদে উপস্থিত থাকায় দলটিকে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর অন্যতম। অনেক আগেই বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা অর্জন হয়েছে। বাংলাদেশ জেন্ডার সমতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে নারীর অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইন্টারনেট প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে দেশ ডিজিটাল হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন ভাষণে। তিনি বলেন, তার দল কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা থেকে শুরু করে এ দেশের যত উল্লেখযোগ্য অর্জন, তার সবগুলো এনেছে আওয়ামী লীগ। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা আমাদের মাথানত না করতে শিখিয়েছেন। আমরা সব বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। ভাষণে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করার আহবান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আসুন ভবিষ্যৎ প্রজšে§র জন্য একটি উন্নত-সমৃদ্ধ, সুন্দর এবং বাসযোগ্য বাংলাদেশ উপহার দিই।

Check Also

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।