ক্রাইমবার্তা রিপোট:নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের বক্তব্যকে দ্বি-চারিতা বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটা উনারা মেনে নেবেন। ক্ষমতাসীন দলের এই কথার মধ্যে দ্বৈত্যতা আছে, এক ধরণের দ্বি-চারিতা আছে বলে আমরা মনে করি। এই কথার মানে, আমরা আগে থেকে যেটা আশঙ্কা করেছি যে, রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন, যেটা আজকে জনগনের দাবি, সেই দাবির প্রতিধ্বনি তারা (ক্ষমতাসীন) করছেন না। তারা ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি যেভাবে নির্বাচন করেছেন, ওই নির্বাচনই করবেন- ক্ষমতাসীন দলের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেই অভিপ্রায়টি ফুটে উঠে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী কথাগুলো বলেন।
নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দল যদি রাষ্ট্রপতিকে সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। যে কমিশনের অধিকর্তারা হবেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। শুধু আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে সেটা একতরফা কমিশন হবে। ওইরকম কমিশনের অধীনে নির্বাচন জনগণের কাছে প্রতারণার নির্বাচন হবে, ওই কমিশনকে জনগণ প্রত্যাখান করবে।
তিনি বলেন, সরকারের যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হয়, তাহলে তারা নিশ্চয়ই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন কমিশন যাতে গঠন করা যায়, সে ব্যাপারে তারা রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন। আর যদি ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রপতির কাছে কানে কানে বলে দেন- আপনিতো আমাদের দলের লোক, আমরা যেটা বলবো, সেভাবে করবেন- তাহলে এদেশে কখনোই শান্তি, স্বস্তি আসবে না। উনারা ধরে মেরে পিটিয়ে, বন্দুকযুদ্ধের নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে যে কবরের শান্তি বিরাজ করাতে চাচ্ছেন, ওই কবরের শান্তিও বিরাজমান থাকবে না।
গণতন্ত্রের পথ চলা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই সরকারকে বিরোধী দলের সাথে সংলাপ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ভালো কিছু করার জন্য, গণতন্ত্রের পথ চলা অব্যাহত রাখার জন্য, দেশে শান্তি-স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সংলাপ অপরিহার্য। আপনারা এরশাদের সময়ে সংলাপ করেছেন, আইয়ুব খানের গোলটেবিলে গিয়ে সংলাপ করেছেন। তাহলে সংলাপ করতে এতো দ্বিধা কোথায়? যদি সদিচ্ছা থাকে, জোর করে ক্ষমতা আটকিয়ে রাখার অভিপ্রায় না থাকে, তাহলে সংলাপ করতে হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবণতিশীল অবস্থার সাথে একমত পোষণ করে রিজভী বলেন, এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে বলে বিএনপি মনে করে। তবে প্রকৃত অবস্থা আরো ভয়ঙ্কর। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেফতার, পুলিশি হেফাজতে গুলি করা সরকারের চাপে গণমাধ্যম সেলফ সেন্সরশিপের পথ বেছে নিয়েছে। বিরোধী দলের ওপর যে নির্যাতন নিপীড়ন চলছে, তা দেশ-বিদেশী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বার বার দুলে ধরলেও বর্তমান স্বৈরশাসক তাদের জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
১৯ জানুয়ারি জিয়ার জন্মদিনের কর্মসূচি
১৯ জানুয়ারি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে দুইদিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী।
১৮ জানুয়ারি বিকেলে মহানগর নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে আলোচনা সভা এবং ১৯ জানুয়ারি সকাল ১০টায় জিয়ার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পন। দিবসটি উপলক্ষে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো পোস্টার প্রকাশ, রচনা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা করবে আলাদাভাবে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাজী আসাদ, কবির মুরাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।