সদর উপজেলার মাহমুদপুর আমিনিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা নামের ওই প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। গত শুক্রবার রাতে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রতিষ্ঠাতার স্বজনরা এ বিষয়ে একটি মামলাও করেছেন।
এদিকে মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের অস্থিরতার কারণে তাঁরা ঠিক মতো ক্লাস নিতে পারছেন না।
মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক আবু আহমেদ ও শাহারুল ইসলাম আগ্রহী ছিলেন। আবু আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সাতক্ষীরার সংবাদপত্র দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক। অন্যদিকে শাহারুল ইসলাম আলীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কমিটির শীর্ষে থাকা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কয়েকটি নাম মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাঠান। ওই বোর্ড যেকোনো একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দিবে।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, গত সপ্তাহে তাঁরা জানতে পেরেছেন চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপক আবু আহমেদকে মনোনয়ন দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড।
এ বিষয়ে আবু আহমেদও জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ সংক্রান্ত চিঠি তিনি পেয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনা জানাজানি হতেই আওয়ামী লীগ নেতা শাহারুল ইসলাম এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেন। তিনি মাদ্রাসার শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছেন। তাঁকে চেয়ারম্যান না করা হলে তিনি মাদ্রাসা চালাতে দেবেন না বলে হুমকিও দিয়েছেন। এমনকি মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্যদের কাছ থেকে জোর করে নিজের পক্ষে স্বাক্ষরও নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এরই এক পর্যায়ে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও আলীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক কাসেদ আলীর বাড়িতে শুক্রবার রাতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে কাসেদ আলীর ছেলে মেহেদি হাসান বাবলু আওয়ামী লীগ নেতা শাহারুল ইসলাম, মাদ্রাসার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সুপার নাসিরউদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত সুপার হাফিজুল ইসলামের নামে সাতক্ষীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্তে পুলিশ শনিবার কাসেদ আলীর বাড়িতে যায়।
এ ব্যাপারে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।
শাহারুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মাদ্রাসার নামে ৩০০ বিঘা জমি আছে। এই জমি নানাজনে লুটেপুটে খায়। এই জমি রক্ষার লক্ষে মাদ্রাসার শিক্ষক ও গ্রামের লোকজন আমাকে এই মাদ্র্রাসার চেয়ারম্যান হতে বলেন। আমি কোনো আপত্তি করিনি। আমি তাঁদের বলেছি আপনারা বোর্ড থেকে কাগজপত্রের কাজ করে আনুন। তবে এখন পর্যন্ত আমি তা হাতে পাইনি।’
শাহারুল আরো বলেন, ‘শুক্রবার সকালে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাসেদ আলীর কাছে মাদ্রাসার আটজন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে যাই। তাঁকে বলি আমার পক্ষে একটি স্বাক্ষর দিতে। তিনি দিতে সম্মত হননি। ওই রাতেই কাসেদ মাস্টারের বাড়ির কাঠঘরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে শুনেছি। গ্রামবাসী তা নিভিয়ে ফেলেন।’
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হাফিজুল ইসলাম বলেন, কমিটির চেয়ারম্যান পদে এসব জটিলতার কারণে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ক্লাস করতে পারছেন না।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন অফিস সহকারী আবদুর রউফ। তিনি এখনও ফেরেননি। কে চেয়ারম্যান হয়েছেন তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে শুনেছি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু আহমেদ চেয়ারম্যান হয়েছেন।’
এদিকে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাসেদ আলীর ছেলে দেবনগর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেদি হাসান বাবলু বলেন, ‘আমার বাবা শাহারুল ইসলামের পক্ষে দেওয়া কাগজে স্বাক্ষর দেননি। এতে শাহারুল ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দেন। ওই রাতেই আমাদের রাইস মিল, রান্নাঘর ও কাঠঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আমি শাহারুল, সাময়িক বরখাস্ত সুপার মো. নাসিরউদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত সুপার হাফিজুল ইসলামকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’
মেহেদি হাসান বলেন, ‘মাদ্রাসার চেয়ারম্যানের পদ কে পাবেন না পাবেন সে সিদ্ধান্ত দেবেন জেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। আমরা সবাই সেটা মেনে নেব।’