ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঝালকাঠি প্রতিনিধি:: ঝালকাঠি জেলা তথ্য অফিসের গাড়ি চালক মোঃ কামরুজ্জামানকে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাত মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার দুপুর ১ টায় ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ রমনী রঞ্জন চাকমা এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানাগেছে, সদর উপজেলার কির্ত্তীপাশা ইউনিয়নের গোবিন্দধ্বল গ্রামের রুস্তম আলী’র শিক্ষিত বেকার পুত্র মোঃ রাকিবুল ইসলামকে সরকারী চাকুরী দেয়ার কথা বলে ৪ লাখ টাকা নেয় কামরুজ্জামান। চাকুরী না দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে টালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করলে এটি প্রতারণা বুঝতে পারে রুস্তম আলী। রুস্তম আলী বাদী হয়ে আদালতে এনআই এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারায় মামলা (নং সিআর ১৫/১৬, সেশন নং ৮৪/১৬) দায়ের করেন। একই ধরণের কাঠালিয়া উপজেলার আউরা গ্রামের মোঃ আব্দুস সালামের কাছ থেকে তার শ্যালককে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ২ লাখ টাকা নেন গাড়ী চালক কামরুজ্জামান। এঘটনায় তিনিও বাদী হয়ে একই ধারায় আদালতে মামলা (নং-২৬/১৬, সেশন নং- ৯১/১৬) দায়ের করেন। উভয় মামলায় আদালতে দীর্ঘ দিন হাজিরা না দেয়ায় রোববার স্বেচ্ছায় হাজিরা দিলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রমনী রঞ্জন চকমা তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি অ্যাডভোকেট আসম মোস্তাফিজুর রহমান মনু ও আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বনি আমীন বাকলাই। আদালত চত্ত্বরে কথা হয় ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকো) এর গাড়ি চালক মোঃ মিরাজ হোসাইনের সাথে। তিনি জানান, আমার ভাগ্নি শারমিন আক্তারকে উচ্চ পর্যায়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে প্রায় ১০ লাখ টাকা নেয় তথ্য অফিসের গাড়ি চালক মোঃ কামরুজ্জামান। তিনি চাকুরী না দিয়ে তালবাহানা করে আত্মসাত করায় শারমিন আক্তার বাদী হয়ে আদালতে প্রতারণা মামলা দায়ের করে। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন আছে। আলোচিত কামরুজ্জামানকে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছে শুনে দেখতে এলাম। এছাড়াও তার নামে অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি:: পানি উন্নয়ন বোর্ডের ¯¬ুইস গেট, ভবন, হিন্দুদের পরিত্যক্ত ও সরকারী সম্পত্তি দখল করে চলছে ইট ভাটার ব্যবসা। সেই সাথে খালের চরের মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার পশ্চিম নৈকাঠির মেসার্স জাফরাবাদ ব্রিক্স কোম্পানিতে (জেবিসি) গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পশ্চিম নৈকাঠি বড় ব্রিজ সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় ফসলি জমি কেটে তৈরি করা হয়েছে জেবিসি। পার্শ্ববর্তী খালে রয়েছে স্লুইস গেট। ¯¬ুইস গেটের উপর ইটের গাঁথুনি দিয়ে উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে কাঠের পুল। ¯¬ুইস গেটের একটি ভবনের আংশিক ভেঙে নিজেদের ইচ্ছেমত ভবন তৈরি করে অফিস কক্ষ করা হয়েছে। আরেকটি ভবনকে বানানো হয়েছে স্টোর রুম (গুদাম)। খালের মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। আবাসিক এলাকায় যে জমির উপর চলছে ইট তৈরীর কার্যক্রম। ওই স্থানটি হিন্দু পরিত্যক্ত (ভিপি) সম্পত্তি। অনুসন্ধানে জানাগেছে, নৈকাঠি গ্রামের উপেন্দ্রনাথ দত্ত ভারতে চলে যাওয়ায় সাবেক এসএ খতিয়ান ৩৮৪ এর ২৩১৬ দাগের ০.৫৪ এবং ৪১৩৯ দাগের ০.৪৮ একর নাল জমি পরিত্যক্ত থাকলে ১৯৯৬ সালের ২ জুন সরকারসংরক্ষনের দায়িত্ব নেয়। একইভাবে নিম চাঁদ, বসন্ত কুমার ও অগ্নিকুমার ভারতে চলে গেলে মোট ৮.১৫ একর সম্পত্তি পরিত্যক্ত হয়। পরবর্তিতে জমিগুলো সরকার ভিপি সম্পত্তি ঘোষণা করে সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইটভাটা কর্তৃপক্ষ উক্ত জমি কোন লিজ না নিয়ে দখলে নেয়। এছাড়াও ইটভাটা সংলগ্ন ভূমি মালিকদের ফসলি জমি জোর করে দখলে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ভূক্তভোগি সৈয়দ মুনসুর আলী ও মোজাম্মেল তালুকদার বলেন, ইটভাটার পাশে আমাদের জমি থাকায় তারা বেশ কিছু জমি আমাদের সাথে কোন কথা না বলে পাইকা কেটে তাঁদের ইটভাটার সীমানায় নিয়ে যায়। তাঁদের কাছে বললে এবিষয়ে বিভিন্ন কথা বলে সময় ক্ষেপন করেই চলছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ফসলি জমির উপর এ ব্রিকস তৈরি করায় এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট গাছ কিনে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, ঝালকাঠি জেলায় ইটভাটা রয়েছে অর্ধশতাধিক। কিন্তু বৈধ ইট ভাটা রয়েছে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি। সেখানে জেবিসি অবৈধ ইট ভাটা গুলোর মধ্যে অন্যতম। অবৈধ ইট ভাটা, সরকারী সম্পত্তি দখল, খালের মাটি কেটে ইট তৈরি, ফসলি জমিতে ইট পোড়ানোর ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন। এ আইনের ৫ নং ধারায় রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং আবাসিক এলাকার ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ইট ভাটা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটা বাণিজ্য। ম্যানেজারের দায়িত্ব পালনকারী মাওলানা মোঃ সোলায়মান বলেন, আমরা জিকজ্যাক হাওয়াই ইটভাটার মাধ্যমে ইট পোড়াচ্ছি। কয়লা সংকট থাকায় কিছু কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারী জমির বিষয়ে ফোরকান ভাই যেন কোন জায়গা থেকে অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু সে অনুমতির কাগজ দেখতে চাইলে সোলায়মান তা দেখাতে পারেননি। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম বলেন, ¯¬ুইস গেটের ভবনের সাথে অন্য প্রাচীর নির্মাণ করতে পারবে। কিন্তু ভাঙতে পারবে না। সরেজমিনে গিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মোঃ আলমগীর হুসাইন জানান, কাগজপত্র পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।