ক্রাইমবার্তা রিপোট:জেলা পরিষদ নির্বাচনের আইন প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে- জেলা পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করা উচিৎ। স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্বাচকম-লী একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সেইসাথে জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন প্রসঙ্গে ৬টি প্রস্তাবনা পেশ করেছে সুজন। কেননা এই নির্বাচকম-লীকে সাধারণ ভোটাররা স্ব স্ব এলাকার বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নির্বাচনে নির্বাচকম-লী হিসেবে কাজ করার জন্য নয়।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনচিত্র এবং নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের তথ্য পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন অসঙ্গতি এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনের আইনটি পূর্ণাঙ্গ আইনে পরিণত করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- সুজন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিল যে, তফসিল ঘোশণার পর থেকেই নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদ নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে কমিশন অত্যন্ত দায়িত্বশীলতা, কঠোরতা ও সাহসিকতার সাথে সফলভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে। কিন্তু নির্বাচনের দিন এমনকি নির্বাচনের পর পর্যন্ত যে চিত্র আমরা দেখলাম তাতে আমাদের সেই প্রত্যাশা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে অসঙ্গতি তুলে ধরে সুজনের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- আইনগতভাবে এই নির্বাচন নির্দলীয় হলেও আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। অন্য কোনো বড় রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী না দেয়ায় এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। ছিল না কোনো উৎসাহ উদ্দীপনাও। এই নির্বাচনে মূলত আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ, পৌরসভা, ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে ২১টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অসংখ্য প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে অনেক এমপি ব্যাপকভাবে আচরণবিধি ল্ঘংণ করেছেন। অনেকেই টিআর, কাবিখা ও অর্থ বরাদ্দের প্রলোভন দেখিয়ে ভোটারদের কাছে নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- ২০০০ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন হওয়ার পর আমাদের আজকের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০০২ সালে প্রকাশিত তার ‘জেলায় জেলায় সরকার’ গ্রন্থে এই আইনের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তার মতে এই আইন বাস্তবায়িত হলে একটি ‘অথর্ব জেলা পরিষদ’ গঠিত হবে। তাই শুধু নির্বাচন পদ্ধতিই নয়, আইনে বর্ণিত আরো কিছু বিষয়ের সাথে সুজন একমত নয়।
আইনের সামগ্রিক বিষয়কে মাথায় রেখে ৬টি বিষয়ে প্রস্তাব দেয় সুজন। এগুলো হচ্ছে- সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারের সকল বিভাগকে জেলা পরিষদের আওতাভুক্ত করতে হবে। উপজেলা পর্যায়েও একই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। নির্বাচকম-লীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনী এলাকা বড় মনে হলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। সংসদ সদস্যদেরকে জেলা পরিষদের উপদেষ্টা রাখার বিধান বিলুপ্ত করতে হবে। চেয়ারম্যান সহ জেলা পরিষদের সদস্যরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বেই সাময়িক বরখাস্তের বিধান পরিবর্তন করতে হবে। সকল ধরনের জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে একই আইন প্রবর্তন করতে হবে এবং উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার ওপর জেলা পরিষদের তদারকিমূলক ভুমিকা প্রত্যাহার করতে হবে।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের সম্পদের বিষয়েও তথ্য জানানো হয়।