ক্রাইমবার্তা রিপোট:আগের বছরের তুলনায় ২০১৬ সালে শিশু নির্যাতন ও হত্যা কমেছে। তবে বেড়েছে বাবা-মার হাতে সন্তান নিহতের ঘটনা। গত বছর সারা দেশে হত্যার শিকার ২৬৫ শিশুর মধ্যে ৬৪ জনই নিহত হয়েছে তাদের পিতা-মাতার হাতে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
বাবা-মার হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে সামাজিক অবস্থান ও সম্পর্কের ব্যাপক পরির্বতন, অতিমাত্রায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং লোভকে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে সব সম্পর্ক অনেকটা খোলামেলা হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা ঢুকে পড়েছে আমাদের সমাজে। সংস্কৃতির এই পরিবর্তন সম্পর্কগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। এছাড়া মাদকাসক্তি আর দারিদ্র্যও এর পেছনে অনেকখানি দায়ী।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে একটি ঐতিহ্য বহন করে আসছে। সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া গেলেই শুধু এই ধরনের ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমাদের সমাজকে রেহাই দিতে পারবো।’
বাবা-মার হাতে সন্তান নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হকও। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রতিবেদন প্রকাশ সভায় তিনি বলেন, ‘দেশে ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে শিশু মৃত্যুহার কমেছে। অথচ বাবা-মার হাতে শিশু নিহতের ঘটনা বেড়েছে। এটা আশঙ্কাজনক।’
গত ১১ জানুয়ারি রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মা তার এক সন্তানকে পাশে বসিয়ে রেখে অন্য সন্তানকে হত্যা করেছে। পরে নিজেও আত্মহত্যা করেছে। এক্ষেত্রে দারিদ্র্যকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘শিশু হত্যার পেছনে দারিদ্র্য অনেকখানি দায়ী। আমাদের তাই সবার আগে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে হবে, শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে হবে।’
রিয়াজুল হক জানান, মানবাধিকার কমিশন শিশু নির্যাতন কমাতে সভা-সেমিনারের আয়োজন করে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারম্যান এমরানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যায়, বিচারহীনতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে আগের
মতোই। তবে সামগ্রিকভাবে শিশু নির্যাতন কিছুটা হ্রাস পাওয়ার কারণ সামাজিক সচেতনতা, প্রতিবাদ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি।’
গত বছরের দশটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৮৯ জন শিশু সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৪১ জন অপমৃত্যু এবং ৬৮৬ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ৫ হাজার ২১২ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো। ২০১৬ সালে সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫৮৯। অর্থাৎ শিশু নির্যাতন কমেছে ৩১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ৩৬টি শিশু হত্যার মামলার রায়, ২৫টি শিশু ধর্ষণ মামলার রায়, ৩টি শিশু অপহরণ মামলার রায় এবং একটি শিশুর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ ঘটনার রায় হয়েছে। এর মধ্যে দু’তিনটি ছাড়া বাকি সব ঘটনা ঘটেছিলো ২০১০-২০১৪ সালে অথবা তারও আগে।