ক্রাইমবার্তা রিপোট:মোঃ আলাউদ্দীন,হাটহাজারী(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের নুরালী মিয়ার হাটের পশ্চিমে শান্তিরহাট বাজারে শান্তিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সিরাজ ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচার (এসবিএম) নামে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ও জনবসতিপূর্ণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেষে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এ ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে পাহাড়ি বা কৃষি জমির মাটি ব্যবহার এবং জ্বালানি হিসেবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে শুধু যে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে তা নয়, প্রাকৃতিক ভারসাম্যও মারাতœক হুমকির মুখেও পড়ছে। অথচ অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবৈধভাবে স্থাপন করা এই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই । কোন ছাড়পত্র ছাড়াই সিরাজ ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচার নামের ইটভাটা কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধভাবে চালাচ্ছে ইট পুড়ানো ও বানানোর কাজ। আবার এই সব ভাটার কাঁচামাল হিসেবে পাহাড়ি বা কৃষি জমির মাটি ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সিরাজ ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচার ভাটায় জ্বালানি হিসেবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ছোট-বড় পাহাড়ি গাছ কেটে কাঠের মজুদ করা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে কোটি টাকার পাহাড়ি বনজ সম্পদ। কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও সিরাজ ব্রিক্স ভাটার মালিক তা মানছেন না। সংরক্ষিত এলাকায় ভাটা স্থাপন করলে ৫ বছরের কারাদন্ড এবং ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান থাকলেও তা প্রশাসনিকভাবে কার্যকর করা হচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,বনাঞ্চল,পাহাড়,সংরক্ষিত এলাকায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেষে রয়েছে সিরাজ ব্রিক্স। এই ইটভাটার মালিকের ছেলে এনাম নিজের ইচ্ছামত পরিবেশ আইন অমান্য করে নিয়ম বর্হিভ’ত ভাবে ফসলি জমি ও পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে তৈরী করছে ইট।
স্থানীয়রা জানান, ধুলাবালি আর কালো ধোয়াই আমাদের এলাকার মানুষ তো দুরের কথা গাছপালা,ঘরবাড়ী,রাস্তাঘাট, দোকানপাট এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব কিছুই যেন ধুলাবালিতে ভরে যায়। শুধু তা নয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরো চরম আকার ধারন করেছে। শান্তিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলে, আমরা ধুলাবালি আর কালো ধোঁয়ার জন্য ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারছি না। ধুলাবালিতে বই,খাতা, স্কুলের পোশাক সম্পুন্ন ভরে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েজন শিক্ষক বলেন, কয়েক বছর বন্ধ ছিল এই ইটভাটাটি, এ সময় আমরা খুবই ভাল পরিবেশে বসে পাঠদান দিয়েছি। তেমন কোন সমস্যা হয়নি। আর এখন ধুলাবালির জন্য পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও এই সব ধুলাবালির মাঝে আমাদেরকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে হচ্ছে। যেন কেউ নেই দেখার মত। সিরাজ ব্রিক্সের মালিকের ছেলে এনাম বলেন, সকল বিভাগকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ইটভাটার কাজ করি। টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন রশিদ দেয় কিনা জানতে চাইলে সে বলে কোন রশিদ নেই এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন আছে বলে প্রথমে স্বীকার করে পরে বলে নেই তবে আবেদন করেছি। এখনো অনুমোদন দেয়নি। এরপরও দাপটের সাথে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ও চলছে তার মত।
ইটভাটা স্থাপন আইনের ধারা ৮(ঙ) অনুযায়ী বিশেষ কোনো স্থাপনা,রেল পথ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল ও ক্লিনিক,গবেষণা প্রতষ্ঠিান বা অনুরুপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হইতে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করার নিয়ম।
বিদ্যালযের পাশ ঘেষে ইটভাটা স্থপন করা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদা আলম বলেন,আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই, তবে এ বিষয়টি আমি দেখছি।
পরিবেশ আইন অমান্য করে ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেষে ইটভাটা স্থাপন,ফসলি জমি ও পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে ইট তৈরী সম্পর্কে উপজেলা সহকারী(ভ’মি)কমিশনার আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফছানা বিলকিস কে কয়েকবার ফোন করার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রামের পরিচালক মাসুদ করিম জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমরা ইতিমধ্যে নোটিশ দেয়া শুরু করেছি, যারা সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে।