ক্রাইমবার্তা রিপোট:মোঃ আনোয়ার হোসেন আকাশ, ঠাকুরগাও প্রতিনিধি ঃ কাজ যতই কঠিন হোক না কেন সে কাজে সফলতা আনতে মনের জোর থাকা দরকার। কাজের প্রতি ইচ্ছা আর ভালবাসা থাকলে তা সম্ভব এর প্রমান দিল ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার পাটগাও গ্রামের মৃত ধীরেন চন্দ্রের মেয়ে সুসমা রাণী। সুসমা দারিদ্রের
রোষানলকে হার মানিয়ে পাটগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষা’১৬ তে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ গ্রামবাসি সকলের মুখে হাসি ফুটেছে। চিরন্তন সত্য’র পথ ধরে বাবা ধীরেন চন্দ্র রায় মার্চ’১৫ মৃত্যু বরণ করে। বাবা মারা যাবার পর মা সলেখা রাণী নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। একাকিত্ব তাকে তাড়া করে। পীরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে স্বামীর ঘর ভিটাটুকু ছেড়ে মেয়ে সুসমা আর ছেলে চৈতন্যকে নিয়ে বাবার বাড়ি পাটগাও গ্রামে চলে আসে। স্বামী হারা সংসারে অসহায়ত্বকে হার মানিয়ে ছেলে মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে অনেক বড় স্বপ্নের জাল বুনে বুকের মধ্যে। সংসারের হাল ধরতে সুসমার মা কখনো অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ, কখনো রাস্তায় মাটি তোলার কাজ, কখনো আবার মাঠে দিন মজুরের কাজ করে যাচ্ছে। নিরলস প্রচেষ্টায় সংসারের হাল ধরে আছে। কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়ের পরীক্ষার ফলাফল গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পরিবারের সবার মুখে হাসি থাকলেও মাঝে মাঝে মায়ের মুখ থেকে হাসিটুকু হারিয়ে যায়। একদিকে স্বামী পরিবারের সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে, অন্যদিকে অর্থাভাবে মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা।
ছেলে পাটগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ দিন দিন বেড়েই চলেছে। অর্থাভাবে কি মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে, পারবে কি ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে ! নানা প্রশ্ন তাড়া করে যাচ্ছে সলেখা রাণীকে। সুসমা মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের মূল্য দিতে পড়ালেখার প্রতি মনের জোর আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তার স্বপ্ন মায়ের কষ্ট যেন সার্থক হয়। আর মনের এই জোর সুসমাকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এনে দিয়েছে। রাণীশংকৈল উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা মায়ের চালিয়ে যেতে পারবেতো স্কুলের পড়ালেখার খরচ। নানা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মায়ের মনে। এ ব্যাপারে কথা হয় মতিলাল মাষ্টার’র সাথে তিনি বলেন, পড়ালেখার প্রতি সুসমার প্রচুর আগ্রহ। কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে মায়ের কাজে অনেক সময় সহযোগিতা করে আসছে। তার স্বপ্ন অনেক বড় হওয়ার।
রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সোহেল রানা বলেন, স্কুলে সুসমাকে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। তার পড়ালেখা এগিয়ে যাওয়ার জন্য বই, প্রাইভেটের বেতন সহ যতটুকু দরকার আমি দেখব। সুসমার মা সলেখা রাণী বলেন, মেয়ে পড়ালেখা শিখে অনেক বড় হবে। অনেক দুর পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি আমার মেয়ের পড়ালেখার পাশে দাঁড়াতেন তবে তারা জীবনে অনেক বড় হতে পারবে আমার বিশ্বাস। সরকারি বেসরকারি, সমাজের বিত্তবান সহ সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। বিকাশ একাউন্ট নং ০১৭৭৪৩৭২২২৪।