ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিএনপিকে ‘মরা গাঙ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির মরা গাঙে জোয়ার আসে না বলেই দলটি এখন আর আন্দোলন করতে পারছে না। ‘এই বছর না ওই বছর আন্দোলন হবে কোন বছর’ এমন ছন্দে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপির আন্দোলনের হুমকিতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। বিএনপি এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। বিএনপির এক নেতা আরেক নেতাকে বিশ্বাস করে না। এক নেতা আরেক নেতাকে সরকারের দালাল বলে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারি (মিডিয়া) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মরহুম মাহবুবুল হক শাকিলের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ওই স্মরণসভার আয়োজন করে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমের সভাপতিত্বে জেলা সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহনগর সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মেজবাহউদ্দিন সিরাজ ও খালেদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা মারুফা আক্তার পপি, অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি, ডা. এম আমানউল্লাহ এমপি, নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, শরীফ আহমেদ এমপি, জুয়েল আরেং এমপি, ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল এমপি, আনোয়ারুল আবেদিন তুহিন এমপিসহ জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ। এসময় মাহবুবুল হক শাকিলের বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবাদুল কাদের বলেন, আতি নেতা, পাতি নেতা, আদুলি নেতা আর সিকি নেতায় দল ভরে গেছে। কর্মীর চেয়ে এখন নেতাই বেশি হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এখন নেতা তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। চেহারা দেখিয়ে নয়। দলের শৃঙ্খলা আনতে হবে।
তিনি বলেন, নেতা নেতা ভাব দেখালেই কী নেতা হওয়া যায়? যায় না। জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদেরকে শিগগিরই নতুন কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো পকেট কমিটি পাঠাবেন না।
দলীয় এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি জমিদার হলে আগামীতে নমিনেশন পাবেন না। ক্ষমতায় আছেন, খাই খাই ভাব চলবে না। বসন্তের কোকিল যেমন বসন্ত চলে গেলে আর দেখা যায় না। তেমনি মৌসুম চলে গেলে মৌসুমী পাখিরাও চলে যায়। আওয়ামী লীগের মৌসুমী পাখিরা সংশোধন হোন। গুটিকতক নেতার অপকর্মের দায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নেবে না। স্মরণসভায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ভালো কিন্তু দলে শৃঙ্খলা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারি (মিডিয়া) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মরহুম মাহবুবুল হক শাকিল সম্পর্কে বলতে গিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, অনেক সংগ্রাম, আনেক আন্দোলনের সুতিকাগার ময়মনসিংহ। স্মরণসভা এতবড় জনসভায় পরিণত হয় এটা আমি জীবনেও দেখিনি। এমন বাঁধভাঙা স্রোত কখনো দেখিনি। পোস্টারের ছবি ছিড়ে যাবে, তোরণের ছবি ভেঙে যাবে, পাথরের ছবি খসে যাবে কিন্তু মানুষের ভালোবাসার ফুল কোনোদিন মুছে যাবে না। মাহবুবুল আলম শাকিল মানুষের ভালোবাসার মুর্ত প্রতীক। একজন রাজনৈতিকের কাছে মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছু নেই। শাকিলের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব কষ্ট পেয়েছেন। তাঁর মধ্যে আমরা বোবা কান্না দেখেছি।
স্মরণসভাকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ শহরে ইজিবাইক, অটোরিকসাসহ সব ধরণের মোটরযান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রেন ও বাসে চড়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী স্মরণসভায় যোগদান করেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারি (মিডিয়া) ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মরহুম মাহবুবুল হক শাকিল ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার বাসিন্দা। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা তাঁর পিতা। স্মরণসভাকে কেন্দ্র আওয়ামী লীগ বড় ধরণের শোডাউন করার প্রস্তুতি নেয়।