ক্রাইমবার্তা রিপোট:র্যাবকে ক্লিন রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। বলেছেন, কেউ ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় করলে তার দায় র্যাবের নয়। সেই সাথে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সামাজিক গবেষণার প্রয়োজন উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমরা র্যাবকে ক্লিন রাখবো। এটাই এই বাহিনীর প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞা। আমাদের সমস্ত স্বার্থ, সমস্ত এনার্জি জনগণ ও রাষ্ট্রের জন্য বিনিয়োগ করতে চাই সর্বোচ্চ দেশ্রপ্রেম, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে। যারা এর বাইরে থাকবে। তাদেরকে র্যাব কখনোই গ্রহণ করে নাই। ভবিষ্যতেও করবে না।’
তিনি বলেন, ‘কেন উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি তৈরি হয়েছিল। কেন এটা হচ্ছে। সেটা সামাজিকভাবে গবেষণা ও অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। এজন্য র্যাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে দেশের ১৪ জেলায় গবেষণা কার্যক্রম চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে।’
তিনি আজ শুক্রবার জুমআর নামাজের আগে র্যাব-১৩ রংপুর এর সদর দফতরে নিজ উদ্যোগে আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
র্যাব-১৩ অধিনায়ক এটিএম আতিকুল্যাহর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ অতিরিক্ত ডিআইজি মঞ্জুর এলাহী ও বশির উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে এলাহি, জাকির হোসেন, রংপুর র্যা ব ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার নজরুল ইসলাম, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারে র্যাবের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে বেনজির আহম্মেদ বলেন, ‘কিছু লোক ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় কাজ করেছে। সেটা র্যাবের দায় নয়। এতে র্যাবের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে মনে করা যথাযথ হবে না। বরং গত ১৩ বছরে র্যাব বাংলাদেশের আইনশৃংখলা রক্ষার করার জন্য যে ত্যাগ করেছে, যে দেশপ্রেম ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছে, যেভাবে মানুষের ভালাবোসা পেয়েছে, সাধারণ মানুষ তাদের আস্থায় নিয়েছে, সেই বিষয়ের প্রতি অন্যায় করা হবে। যদি এভাবে কথা বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে তাদের র্যাব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। র্যাবের ইন্টারনাল ইনকোয়ারিতেই তাদের প্রথম দায়ী করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাদের মামলা করা হয়েছে। মামলার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে র্যাব কোনো ধরনের প্রশ্রয়-আশ্রয় দেয়নি। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে এই বিষয়টাতে খুব সতর্ক।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ তো আর ফ্যাক্টরি থেকে অর্ডার করে বানিয়ে আনা যায় না। এখন যদি কেউ অন্যায়ের প্রলোভনে প্রলোভিত হয়, সেটা তার বিষয়, র্যাবের বিষয় নয়। গত ১৩ বছরে র্যাবের কেউ কোনো ধরনের অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকলে সাথে সাথেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিয়েছি। শতশত সদস্যকে জেলে পাঠিয়েছি। চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছি। মাতৃবাহিনীতে ফেরত পাঠিয়েছি। লঘু শাস্তি দিয়েছি। বড় ধরনের শাস্তি দিয়েছি। শাস্তি দেয়ার ব্যপারে র্যাব কঠোর। এর ধরনের অপকর্ম, অন্যায় র্যাব কখনোই সহ্য করবে না।’
দেশে জঙ্গিবাদের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে র্যাব প্রধান বলেন, ‘এই মুহূর্তে হয়তো এটা দমন করা গেছে। ২০০৪ সালেও কিন্তু তাদের দমন করা হয়েছিল। ১০/১২ বছর আবারও তাদের উন্থান ঘটেছে। তারা শক্তি সঞ্চয় করেছে। পুনরায় সংগঠিত হয়েছে। এ ধরনের হামলা করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমাদের দায়িত্ব হবে এদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ও সরকারের নেতৃত্বে আইনশৃংখলাবাহিনীকে সহযোগিতা করা যাতে তারা আবার পুনর্বাসিত না হতে পারে। কেন এটা হচ্ছে সেটা সামাজিকভাবে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। কেন ২০০৪ সালে হলো। কেন আমার ১২ বছর পরে হলো।’
জঙ্গিবাদ নির্মুলে সামাজিক গবেষণা প্রয়োজন উল্লেখ করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘যত জঙ্গি ধরা পড়েছে, তার অধিকাংশই মানুষ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। কেন উত্তরাঞ্চলে জেএমবি তৈরি হযেছিল, কেন আবারও ২০১৫ সালে যে হামলা শুরু হলো। এগুলো আসলে সামাজিক গবেষণার বিষয়। র্যাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌখভাবে দেশের ১৪টি জেলায় গবেষণা করবে, কেন এ ধরনের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের উন্থান ঘটে। এটা খুঁজে বের করা। যাতে করে শুধু এটা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নয়, এটা যাতে না ঘটে তার ব্যবস্থা করা।’
তিনি বলেন, ‘দেশের দশমিক ১ ভাগ মানুষও যদি অশান্তিপ্রিয় হয় তবুও ১৬ হাজার মানুষ টেরোরিস্টের শিকার হয়। এটাও বড় ফিগার। তবে আমরা যে ফিগার পেয়েছি। তা খুবই নগণ্য সংখ্যক। আমাদের পক্ষ থেকে যে তদন্ত করা হযেছে। যে কাজ আমরা করেছি। তাতে ১ হাজার থেকে অনেক অনেক কম লোক এই কাজে একটিভ। এরমধ্যে অনেকেই গুলিতে নিহত হয়েছে। এধরনের একটা বিশাল সংখ্যাক লোককে গ্রেফতার হয়েছে। তারা কারাগারে আছে।’ তিনি বলেন, ‘তারপরেও তারা ঝুঁকিপূর্ণ।’ বলেন, উত্তরাঞ্চলের ৯৯ ভাগ মানুষই শান্তিপ্রিয়।
এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘লিটন হত্যাকন্ডের বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। পুলিশের পাাশাপাশি র্যাব ফোর্সেসও এটি ছায়া তদন্ত করছে। যারা প্রকৃত খুনি তাদের খুঁজে বের করার জন্য। প্রকৃত খুনিদের বের না করা পর্যন্ত র্যাবের পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
র্যাব প্রধান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে যেভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি চলছে, আশা করি খুব শিগগিরই দেশ থেকে মঙ্গার মতো করেই দারিদ্র্যবিমোচন হবে। এই মুহূর্তে দেশের ৯ ভাগ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এই সংখ্যার হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। অর্থাৎ আগামীতে আর বাংলাদেশে চারম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী কোনো মানুষ থাকবে না। অসহায় পরিবারে ক্ষুধার্ত পরিবারে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করবে না। তখন এভাবে কম্বল বিতরণ করা লাগবে না।’
অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীসহ দুঃস্থদের মধ্যে কয়েক হাজার কম্বল বিতরণ করেন বেনজির আহমেদ।