বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক : টিআই

ক্রাইমবার্তা রিপোট:বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক। তবে এটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ নয়। বরং সুচকভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় এখানে দুর্নীতির মাত্রা অধিক বলে মনে করছে বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। এবার দুর্নীতির ধারনা সূচকে (সিপিআই) বাংলাদেশের এবার স্কোর ২৬তম। যা ২০১৫ সালে ছিল ২৫। তবে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নদুর্নীতি নিয়ন্ত্রনকারী দেশ। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৬ অনুযায়ী ২০১৫ সালের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর এক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিম্নক্রম অনুযায়ী অবস্থানের দুই ধাপ উন্নতি হয়েছে। তবে বৈশ্বিক গড় স্কোরের তুলনায় বাংলাদেশের ২০১৬ সালের স্কোর এখনো অনেক কম।

ঢাকাস্থ টিআইবি আয়োজিত ধানমন্ডির নিজস্ব কার্যালয়ে আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে সিপিআই প্রকাশ করা হয়। সিপিআই তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। উপস্থিত ছিলেন, সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান ট্রাস্টি এম. হাফিজউদ্দিন খান এবং ট্রাস্টি ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। ২০১৬ সালের সিপিআই-এ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। সূচকের তথ্য সংগ্রহে মূলত চারটি ধাপ অনুসৃত হয়।

সিপিআইতে বলা হয়েছে, গতবারের চেয়ে এক স্কোর বৃদ্ধি পেলেও দক্ষিণ এশিয়ায় এবারও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হওয়ায় দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা এখনও উদ্বেগজনক। এবার ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ি ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৫তম। নিম্নক্রমানুসারে ১৫তম। গত ২০১৫ সালের তুলনায় স্কোর ১ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালেও বাংলাদেশ ২৬ স্কোর করেছিল। এই সূচক রাজনীতি ও প্রশাসনে বিদ্যমান দুর্নীতির মাত্রার ধারনার উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়।

২০১৬ সালের সিপিআই অনুযায়ী ৯০ স্কোর পেয়ে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে যৌথভাবে অবস্থান করছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। ৮৯ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড এবং ৮৮ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইডেন। আর সর্বনিম্ন ১০ স্কোর পেয়ে ২০১৬ সালে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে সোমালিয়া। ১১ ও ১২ স্কোর পেয়ে তালিকার সর্বনিম্নের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দেশ হিসেবে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ সুদান ও উত্তর কোরিয়া।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সাথে একই স্কোরপ্রাপ্ত অন্য পাঁচটি দেশ হলো- ক্যামেরুন, গাম্বিয়া, কেনিয়া, মাদাগাস্কার ও নিকারাগুয়া।

সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক দুর্নীতি পরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০১৬ সালের সিপিআই অনুযায়ী বৈশ্বিক দুর্নীতি পরিস্থিতি আশংকাজনক। সূচকে অন্তর্ভুক্ত ১৭৬টি দেশের মধ্যে ৬৯ শতাংশ দেশই ৫০ এর কম স্কোর পেয়েছে। সিপিআই অনুযায়ী ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। এবছর দেশটির স্কোর ৬৫ এবং ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী অবস্থান ২৭। এরপর ৪০ স্কোর নিয়ে ৭৯তম অবস্থানে রয়েছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এরপরে ৩৬ স্কোর পেয়ে ৯৫তম অবস্থানে যৌথভাবে রয়েছে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। এরপর ৩২ স্কোর পেয়ে ১১৬তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। আর ২৯ স্কোর পেয়ে ১৩১তম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের পরে ১৫ স্কোর পেয়ে সূচকে নিম্নক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থাৎ বাংলাদেশ নিম্নক্রম অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, টানা চার বছর পর (২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত) সূচকে অন্তর্ভুক্ত না হলেও ২০১৬ সালে মালদ্বীপ আবার অন্তর্ভুক্ত হয়।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১২ সালেও বাংলাদেশের স্কোর ২৬ ছিল। সূচক অনুযায়ী বৈশ্বিক গড় ৪৩ হওয়ায় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র আফগানিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হওয়ার প্রেক্ষাপটে বলা যায় বাংলাদেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে মনে করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের আইনী, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতি কাঠামো তুলনামূলকভাবে সুদৃঢ়তর হয়েছে এই ধারণা থেকে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রয়োগের ঘাটতির কারণে আমরা আরো ভালো করতে পারিনি।

তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে কোন ধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীন ও কার্যকরভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, একইসাথে জবাবদিহিতার জন্য শক্তিশালী দাবি উত্থাপনে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও বেসরকারি সংস্থাসহ আপামর জনগণের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ- সর্বোপরি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়, তথাপি বাস্তবে দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি এবং তা প্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না।

সুলতানা কামাল বলেন, এবারের স্কোর আমাদের এতটুকু স্বস্তি দিচ্ছে যে আমরা আগের চেয়ে আরো নিচে নেমে যাইনি। আমাদের অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে। কিন্তু এতে আমাদের দুর্নীতিবিরোধী যে সংগ্রাম বা অবস্থান তাকে লঘু করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এখনো আমরা খুশি হওয়ার মত অবস্থানে যেতে পারিনি। এজন্য দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের স্বার্থে সরকারি পদমর্যাদার অপব্যবহার করা হচ্ছে।

Check Also

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।